নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ‘রাজাকার’ মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন ও কিশোরগঞ্জের অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তুর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
রোববার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন।
এর আগে ট্রাইব্যুনাল অবিযুক্ত শামসুদ্দিনের বয়স সম্পর্কে জানতে চান। এসময় তিনি তার বয়স এবং ২০০৩ সল থেকে আইন পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তবে আইন পেশার আগে তিনি স্কুলের শিক্ষকতা করতেন বলে জানান।
অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আরো জানান, ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।
তার পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে কি না ট্রাইব্যুনাল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আমার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজন কেউই জানে না। তাই এখন পর্যন্ত আইনজীবী নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।’
এ সময় প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীকে অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি তার পরিবারকে জানানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে তার খাবারের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রাখারও আদেশ দেন।
এদিকে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কিশোরগঞ্জ পুলিশের একটি দল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে জেলার সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে। শামসুদ্দিন এ সময় টিকিট কেটে চট্টগ্রামগামী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
শামসুদ্দিন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে করিমগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১০ জনকে হত্যাসহ নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তারা দীর্ঘ তদন্তের পর গত ২৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ ও তার ভাই নাসির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেন। নাসির উদ্দিন আহমেদ পলাতক।
এদিকে মাওলানা শাখাওয়াত হোসেনকে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর উত্তরখানের মাস্টারপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, শাখাওয়াত গত একমাস যাবৎ মাস্টারপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তদন্ত করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
মাওলানা শাখাওয়াত হোসেন ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। পরে ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন।
২০০১ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে আবারো তিনি পরাজিত হন। ২০০৬ সালে অলি আহমেদের এলডিপিতে যোগ দেন শাখাওয়াত। পরের বছর দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর ফেরদৌস আহম্মেদ কোরেশীর পিডিপিতে যোগ দেন।