নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) সরকার নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ৯ হাজার ৭৭ কোটি টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১১ কোটি টাকা বেশি। জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অক্টোবরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ২৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
আগের মাসগুলোতে এর অঙ্ক ছিল যথাক্রমে সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ৪৯২ কোটি ৫১ লাখ টাকা, আগস্টে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং জুলাইয়ে ছিল এক হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চার মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৭৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে বিনিয়োগে ভাটা আর অন্যদিকে গ্রাহকদের টাকা সঞ্চয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর নগদ অর্থ (তারল্য) জমেছে। লোকসান এড়াতে ও গ্রাহকদের সঞ্চয়ে অনুৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলো আমানতে সুদের হার কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় মানুষ অধিক মুনাফার আশায় ব্যাংকের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে। তাছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করমুক্ত রাখায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।
ব্যাংকগুলো একযোগে আমানতে সুদের হার কমানোতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়ায় সরকারের একধরনের বোঝা তৈরি হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘শুধু বোঝা বেড়ে যাওয়ার কারণেই এ খাতে সরকারের সুদের হার কমানো ঠিক হবে না। সরকার এ খাতে সুদের হার কমালে সাধারণ মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এ খাতে সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ বেশি বিনিয়োগ করে থাকে।’
সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়াতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে সুদের হার কিছুটা বাড়িয়েছে সরকার। পরিবার, পেনশনার, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১ শতাংশ থেকে ক্ষেত্রবিশেষে ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করমুক্ত রেখেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ বিদ্যমান রয়েছে।’