বিনোদন ডেস্ক : সংগীতের সঙ্গে বেলাল খানের সখ্য গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়। শিক্ষা জীবন শেষে সবাই যখন বিসিএস কিংবা চাকরির পেছনে ছোটে, তিনি তখন সংগীতের পেছনে ছুটেছেন, যার ফলাফল আজকের কণ্ঠশিল্পী ও কম্পোজার বেলাল খান।
ক্যাম্পাস জীবনে সংগীতের ভুবনে প্রবেশ করলেও পরিচিতি ঘটে ন্যান্সির সঙ্গে গাওয়া ‘পাগল তোর জন্য রে’ গানটির জন্যে। গানটি মূলত ‘পাগল তোর জন্য রে’ ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল। তারপর আর পরিচিতির পেছনে ছুটতে হয়নি তাকে। এ প্রসঙ্গে বেলাল বলেন, ‘গানটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে, যেখানেই যেতাম, সেখানেই আমার গাওয়া গানটি বাজতে শুনতাম। একবার মাছ কিনতে বাজারে গিয়েছি, এমন সময় মাছের দোকানদারের ফোন বেজে উঠলো। সেখানে আমার গাওয়া গানটি বেজে চলেছে।’
চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করার মাধ্যমেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন বেলাল খান। ফলে চলচ্চিত্রের গানের সঙ্গে তার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অল্প অল্প প্রেমের গল্প’ ছবিতে তার কম্পোজিশনের টাইটেল গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায়। কলকাতার রূপরেখার সঙ্গে গাওয়া গানটি এখন শ্রোতাদের মুখে মুখে। নিজের সুরে এই ছবিতে ফুর্তি ‘শিরোনাম’ এ আরও একটি গান গেয়েছেন তারান্নুম মল্লিকের সঙ্গে।
চলতি বছর তার সাফল্যের ঝুড়িতে যোগ হয়েছে ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’ ছবির ‘ইস্টিশন’ শিরোনামের গানটি। সুফি ঘরনার এই গান দিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করেছেন ভিন্ন এক শিল্পী হিসেবে। এ প্রসঙ্গে বেলাল খান বলেন, ‘ছবির জন্য গানটি তৈরি হলেও অডিও রিলিজ হওয়ার পর যেদিন প্রথম শ্রদ্ধেয় কুমার বিশ্বজিৎ দা ফোন করে আমাকে জানালেন, বেলাল তুমি তো অনেক গান করছো এবং করেছো, কিন্তু তোমার গাওয়া ইস্টিশন গানটি শুনে আমার মনে হয়েছে আসলেই নতুন প্রজন্ম অনেক ভালো করছে। সত্যি তোমার গানটি প্রশংসনীয়। এগিয়ে যাও।’
বেলাল খানের কম্পোজিশনে মুক্তি পাওয়ার অপেক্ষায় আছে বেশ কয়েকটি সিনেমার গান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নোমান রবিনের ‘প্রেমই খোদা-খোদাই প্রেম’, মঈন বিশ্বাসের ‘মার ছক্কা’, রফিক শিকদারের ‘ভোলাতো যায় না তারে’, মাসুদ আকন্দের ‘স্বপ্নপোকা’ ছবির গান।
চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাকের পাশাপাশি নিজের নিজের দ্বিতীয় একক অ্যালবামের কাজও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় আড়াই বছর পর আগামী ভালোবাসা দিবসে বাজারের আসছে তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘বাজি’। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি ভিন্ন কিছু উপহার দিতে। অ্যালবামের সব গানেই থাকবে বৈচিত্র্যে ভরা।’ অ্যালবামটিতে মোট নয়টি গান থাকছে। এর মধ্যে দুইটি গানের মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করবেন বলে জানান এই শিল্পী।
অডিও ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাল খান বলেন, ‘প্রযোজনা সংস্থাগুলো এক একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আর ব্যবসায়ীর কাজ ব্যবসা করা। তবে এটা ঠিক শিল্পের মধ্যে অশিল্পের লোকের সংখ্যাই বেশি। বায়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীদের অনেকেই মনে করেন এখন আর আগের মতো ভালো গান হচ্ছে না।’
বেলাল খান বরাবরই ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করেন, যার সত্যতা পাওয়া যায় তার কথার মধ্যে। ভালো গান হচ্ছে না বলে বায়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীদের যে অভিযোগ তা তিনি মানতে নারাজ। তার মতে অংসখ্য ভালো গান এখন হচ্ছে। কিন্তু অধিক গানের ভিড়ে তা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
শুধু কণ্ঠশিল্পী হিসেবে নয়, কম্পোজার হিসেবেও বেলাল খানের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। তবে গানের এ অংশে কাজ করতে গিয়ে প্রায়ই নতুন শিল্পীদের অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এখন তো সবাই কম্পোজার। বেশিরভাগ লোকই না জেনে মিউজিক করছে। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’
সম্প্রতি তিনি ভিন্ন ধারার এক গান নিয়ে আসছেন শ্রোতাদের মাঝে। এই প্রথমবার তার কণ্ঠে ভক্তরা পাবেন রক এবং হিপহপ টাইপের গান। এ সম্পর্কে বেলাল বলেন, ‘এই প্রথম আমি হিপহপ টাইপের গান গেয়েছি। যেহেতু অডিওর পাশাপাশি ভিডিও অনেক জনপ্রিয়, তাই আমি একেবারে নতুনরূপে হাজির হব। সামনের দিনগুলোতে আমার চিন্তাধারা হচ্ছে, গানের সংখ্যা না বাড়িয়ে আমি ভালো কিছু গান উপহার দেব।’
প্লে-ব্যাক ও একক অ্যালবামের সঙ্গে মিক্সড অ্যালবামেও কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি পড়শী ও খেয়ার সঙ্গে ডুয়েট গান গেয়েছেন।
বেলাল খানের সঙ্গে আলাপচারিতা যখন একেবারে শেষ প্রান্তে, তখন তিনি এক মজার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। একবার চুল কাটাতে সেলুনে গিয়েছেন, এক পর্যায়ে নাপিত তার চুল কাটতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই নাপিত বেলাল খানের করা একটি গান গাইতে শুরু করলেন। অথচ সে শিল্পীকে ভালো করে চেনেই না।