ঢাকামঙ্গলবার , ২ ডিসেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

কয়লার অভাবে ইটভাটা বন্ধ, লোকশানে মালিকরা

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ২, ২০১৪ ৮:২২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Trishal-Pic-1
ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :

ময়মনসিংহের দুটি শুল্ক স্টেশন দিয়ে ভারত থেকে আমদানি না হওয়ায় কয়লার অভাবে ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুমে ইট পোড়াতে পারছেন না ইটভাটার মালিকরা। এরফলে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন এ উপজেলার এসব ইটভাটার মালিকরা।

লোকসান থেকে বাঁচতে অনেকে ইটভাটায় কাঁচা ইট বানানো শুরু করেও আবার বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে অতিরিক্ত কাঁচা ইট তৈরি করে পোড়াতে না পারায় লাখ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়েছেন।  ভারত থেকে কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় ত্রিশালের প্রায় অর্ধশত ইটভাটা এখনও ইট পোড়ানো শুরু করতে পারেনি। কয়লার অভাবে ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ মৌসুমি শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

এদিকে কয়লা আমদানি না থাকায় ময়মনসিংহ শুল্ক স্টেশনের দুটি কাস্টমস অফিসে এক টাকার রাজস্বও আদায় হয়নি। অথচ গত মৌসুমে এ দুটি স্টেশন থেকে প্রায় ১শ কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয়েছিল।

ত্রিশালের কয়েকটি ইটভাটা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ইটভাটায় অন্তত ১০ লাখ করে কাঁচা ইট তৈরি করা হয়েছে। ভাটায় আগুন দিতে না পারায় কাঁচা ইটের স্তূপ জমেছে।

ইটভাটা মালিকরা জানান, একটি ভাটায় প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত কাঁচা ইট তৈরি হয়। সে হিসাবে ইতোমধ্যে কোটি কোটি কাঁচা ইট বানিয়েও কয়লার অভাবে পোড়াতে পারছেন না ভাটার মালিকরা। দ্রুত কয়লা পাওয়া না গেলে উপজলার প্রায় ৮০ শতাংশ ভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ থাকবে। এই পরিস্থিতিতে এ বছর ইটের দাম অনেক বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইটের দাম বেড়ে ৬ টাকা থেকে ৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ফলে সংকটে পড়বে নির্মাণ ও আবাসনশিল্প।

ত্রিশালের ইটভাটাগুলোতে ভারত থেকে আমদানি করা কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর ৯০ শতাংশ পূরণ করে থাকে। ভারতের পরিবেশ আন্দোলনকারী ও স্টুডেন্ট ইউনিয়নের দাবির মুখে দেশটির ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল গত ১৭ এপ্রিল মেঘালয় রাজ্য থেকে কয়লা উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধের নির্দেশ দেন। তবে মেঘালয়ের খনি ও ভূতত্ত্ব বিভাগ রাজ্যের উত্তর গারো পাহাড় জেলায় কয়লা খনন বন্ধ রাখলেও অন্য জেলাগুলোতে কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রাখার আদেশ দেয়।

ইট ব্যবসায়ীরা জানায়, নভেম্বরের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত ইট পোড়ানোর ভরা মৌসুম। ইটের ভাটা ও রড তৈরির কারখানায় ভারতীয় কয়লা ব্যবহার করা হয়। এসব কয়লার বেশির ভাগ বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন ইটভাটায় নেয়া হয়।

ত্রিশালের ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাদ এবং এ ইউএম ব্রিকসের মালিক খন্দকার শাহজাহান কবীর জানান, আমার দুটি ভাটায় কয়লার অভাবে আগুন দিতে পারিনি। শুধু আমার ভাটা নয়, কয়লা সরবরাহ না থাকায় ত্রিশালের ৯০ ভাগ ইটভাটায় আগুন দিতে পারছেন না মালিকরা। মৌসুম শুরুর দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও কয়লার অভাবে এসব ভাটায় ইট পোড়ানো বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। দাদন দিয়ে শ্রমিকদের আটকানো যাচ্ছে না। কাজ না দিতে পারায় আমাদের প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। মালিকরা ত্রিশালের অন্তত অর্ধশতাধিক ভাটায় কাঁচা ইট তৈরির কাজও বন্ধ করে দিয়েছেন।

ভাটা মালিক মানিক মিয়া জানান, মৌসুমের শুরুতে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট থেকে পুরনো ৪০ টন কয়লা কিনে ভাটায় আগুন দিয়েছিলাম। বর্তমানে মজুদ কয়লা শেষ হওয়ায় আগুন বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। পুরনো কয়লা ৭ হাজার টাকা টন থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার টাকা টন। এত উচ্চ মূল্যের কয়লা দিয়ে ইট পুড়ানো সম্ভব নয় বলে আগুন বন্ধ করে দিচ্ছি। এক মৌসুমে একটি ভাটায় কমপক্ষে ৮শ টন কয়লা প্রয়োজন। কয়লার অভাবে ইটভাটায় বানানো লাখ লাখ কাঁচা ইট পোড়ানো বন্ধ হয়ে রয়েছে। পোড়াতে না পারায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব কাঁচা ইট।

ভাই ভাই ইট ভাটার মালিক আনিছুর রহমান ভুটো জানান, মৌসুম শুরুর পর প্রায় প্রতিটি ইটভাটায় দশ লক্ষাধিক করে ইট তৈরি করা হয়েছে। এসব ইট শুকিয়ে যাওয়ায় যেমন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ বৃষ্টি নামলে সব ইট পুনরায় মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। সময়মতো কয়লা না পাওয়া গেলে ইটভাটা মালিকদের লাখ লাখ টাকার লোকসান গুনতে হবে।

ময়মনসিংহের সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী শুল্ক স্টেশন থেকে প্রতিবছর প্রায় শতকোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এ বছর কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না।

কড়ইতলী কোল অ্যান্ড কোক ইম্পোর্টার্স ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া মোবাইলে জানান, গত অর্থবছরে এক লাখ ৮৫ হাজার টন কয়লা আমদানি হয়। এ থেকে সরকার ৪০ কোটি টাকার রাজস্ব পায়। এ বছর ভারতের দিল্লির হাইকোর্টে পরিবেশবাদীরা রিট করার কারণে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। ২ ডিসেম্বর ভারতের হাইকোর্ট রিট নিষ্পত্তি করলে আমরা ৪ ডিসেম্বর থেকে কয়লা আমদানি করতে পারবো।

ময়মনসিংহের আঞ্চলিক পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ইউসুফ আলী জানান, ময়মনসিংহের প্রায় ১শ অনুমোদিত ও দেড়শ অননুমোদিত ইটভাটা রয়েছে। অধিকাংশ ভাটাই আগুন দেয়া হয়নি। আমরা কাঠ বা লাকড়ি দিয়ে ইটভাটায় ইট পোড়ানো ব্যাপারে কঠোর থাকায় সেগুলোর উপর নির্ভর করে কেউ ভাটায় আগুন দিচ্ছেন না।

অন্যদিকে, কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার, বেকার হচ্ছে হাজার হাজার ইটভাটার মৌসুমী শ্রমিক, কোটি কোটি টাকার লোকাসানের মুখে ভাটার মালিকরা। ঝুঁকিতে রয়েছে নির্মাণ শিল্প।