রাজশাহী প্রতিনিধি :
গত দুই বছর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়েই ছিল হরতাল, অবরোধের কর্মসূচি। এ অস্থিরতার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় টমেটো পাঠাতে না পেরে দুই বছর ধরে টমেটো চাষ করে লোকশানে পড়তে হয়েছিল চাষীদের।
তবে চলতি মৌসুমে আশায় বুক বেঁধেছে টমেটো চাষীরা। এ মৌসুমে টমেটোর ভালো দাম পাচ্ছে চাষীরা। তাই গত দুই বছরে টমেটো নিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া কৃষকের স্বপ্ন এ মৌসুমে রঙ্গিন হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
দেশের সিংহভাগ শীতকালীন টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে গোদাগাড়ীতে। উপজেলায় এ মৌসুমে দুই হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল। মাঠে গত বছরের তুলনায় এক হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ কম হওয়ায় উৎপাদনও তুলনামুলক কম।
গোদাগাড়ী কৃষি অফিস সুত্র জানায়, প্রতি মৌসুমে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ কোটি টাকার টমেটো কেনাবেচা হয়ে থাকে। ১৯৯৪ সাল থেকে গোদাগাড়ী উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে টমেটো চাষ শুরু হলে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় অন্য ফসল মাঠে না চাষ করে টমেটো চাষের দিকে ঝুঁকেছেন চাষীরা।
২০১৩ সালে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছিল। তার আগের বছর ২০১২ সালে হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ হয়। মোট টমেটো উৎপাদন হয় ১৮ হাজার ৯শ মেট্রিক টন।
তবে ওই দুই মৌসুমে টমেটো উঠার আগেই হরতাল ও অবরোধের মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছিল টমেটো চাষীরা। দম কমতে কমতে ওই মৌসুমগুলোতে প্রতি মণ টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে, এবারে আশায় বুক বেঁধেছে কৃষকরা। টমেটো চাষীরা জানান, গোদাগাড়ীতে এখন প্রতি মণ পাকা টমেটো ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, কাঁচা টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৬৫০ টাকায় দরে। এর দুই সপ্তাহ আগে জমিতে টমেটো না পাকলেও প্রতি মণ কাঁচা টমেটো বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন এক হাজার ৪শ টাকা দরে।
উপজেলার চৈতন্যপুর এলাকার টমেটো চাষী আবদুর রহমান (৫০) জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে শীতকালীন টমেটো চাষ করে আসছেন। গত দুই বছরে টমেটোতে তার এক লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
তাই এবারে টমেটোর আবাদ কম করেছেন। এ মৌসুমে তিনি চাষ করেছেন তিন বিঘা জমিতে। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই জমি থেকে দুই দফা টমেটো তুলে বিক্রি করেছেন ৩৫ হাজার টাকা। আর একবার টমেটো উঠলেই খরচ উঠে তিনি লাভের অংক গুণবেন।
বোগদামারী গ্রামের টমেটো চাষী জামাল উদ্দীন জানান, একটু আগাম জাতের টমেটো চাষ করেছিলেন বলে প্রথম দুই দফাতেই দুই বিঘা টমেটো চাষের খরচ প্রায় উঠে গেছে। রোববার তৃতীয় দফায় ১৩ মণ পাকা টমেটো বিক্রি করেছেন প্রায় দশ হাজার টাকার।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. এম সাইফুল আলম বলেন, গোদাগাড়ীতে এ বছর দুই হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন হাইব্রিড জাতের টমেটো চাষ হয়েছে। গতবারের তুলনায় কম জমিতে টমেটো চাষ করায় টমেটোর দাম ঠিক আছে। বর্তমান বাজার আরো দুই সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকলে কৃষকরা লাভবান হবে বলে তিনি জানান।