রাজশাহী প্রতিনিধি :
রাজশাহী মহানগর ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে আশঙ্কাজনক হারে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। নভেম্বর মাসে মহানগরীর চারটি থানা ও জেলার নয়টি থানায় ৪১টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি)। এর মধ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ২৫টি ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ১৬টি।
নির্যাতনের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাগুলোর মধ্যে গত ২৬ নভেম্বর রাজশাহীর পবার বায়া বিরস্থল পাড়ায় যৌতুকের দাবিতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় পাষ- স্বামী ফারুক। পরে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে (২৯ নভেম্বর) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তবে এ ঘটনাকে আতœহত্যা বলে প্রচার চালানো চেষ্টা করে স্ত্রী হত্যাকারী স্বামী ফারুক। নির্যাতিত ওই গৃহবধূ হলেন রাজশাহী মহানগরীর ছোট বনগ্রাম কেচুয়াতল এলাকার নূর হকের মেয়ে আখি (২০)।
এদিকে গত ২৩ নভেম্বর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম শ্রেণিতে পড়–য়া সাত বছরের এক শিশুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে হানিফ (২০) নামের এক বখাটে যুবক। পরে ধর্ষিতার পরিবারের লোকজন স্থানীয় এক সেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কাছে বিচার দিলে বখাটে হানিফকে ধরে নিয়ে মারধর করে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে মিমাসা করে দেয়। এই জরিমানার ১ লাখ টাকার মধ্যে ভিকটিমের পরিবারকে মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৮০ হাজার টাকা ওই নেতাসহ সালিশের মাতব্বরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। |
খবর পেয়ে গোদাগাড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাহবুবা সুলতানা পুলিশ নিয়ে ভিকটিম ওই শিশুকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেন। পরে গত ২৯ নভেম্বর গোদাগাড়িী থানায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে মামলা করলে গত রোববার দুপুরে উপজেলার লস্করহাটি এলাকার মৃত ইলিয়াস আহমেদের ছেলে মোফায়েল আহমেদ (৫২) ও একই এলাকার মৃত ইমরান আলীর ছেলে শাজাহান আলীকে (৪২) গ্রেফতার করে।
এ ছাড়াও মহানগরী চারটি থানায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে চারটি ও জেলার নয়টি থানায় নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫টি। মহানগরীর বাইরের থানাগুলোতে সংঘটিত হয়েছে ২১টি নির্যাতনের ঘটনা। এর মধ্যে দুর্গাপুরে একটি, গোদাগাড়ীতে দুটি, বাঘায় তিনটি, বাগমারায় তিনটি, তানোরে চারটি, পবায় দুটি, পুঠিয়ায় দুটি, মোহনপুরে চারটি নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে হত্যা ছয়টি, হত্যার চেষ্টা একটি, আত্মহত্যা তিনটি, ধর্ষণ তিনটি, ধর্ষণের চেষ্টা একটি, রহস্যজনক মৃত্যু একটি, অ্যাসিড নিক্ষেপ একটি এবং অন্যান্য ঘটনা ঘটে সাতটি।
আর গতমাসে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে মোট ১৬টি। এর মধ্যে মহানগরীতে সংঘঠিত হয়েছে ২টি এবং জেলার নয়টি থানায় সংঘটিত হয়েছে ১৪টি। এর মধ্যে তানোরে দুটি, পুঠিয়ায় দুটি, বাগমারায় একটি, গোদাগাড়ী ছয়টি, পবা একটি, দুর্গাপুরে দুটি, যৌন হয়রানি ছয়টি এবং অপহরণের শিকার দুজন শিশু।
অপরদিকে, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (রাবি শাখা) এর দেওয়া তথ্যানুয়ায়ী রাজশাহী বিভাগে ও জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে মোট ৩৪টি। এর মধ্যে অপহৃত হয়েছে পাঁচজন, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১৪ জন নারী, ধর্ষিত হয়েছে পাঁচজন, ভিডিও ধারণের ঘটনা ঘটেছে দুটি, ধর্ষণের চেষ্টা দুটি, যৌন হয়রানি চারজন, উত্ত্যক্তকরণের ঘটনা দুটি।