আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
অশালীন বক্তব্য দিয়ে ফের ফেঁসে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বুধবার জলপাইগুড়িতে এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় সমালোচকদের সমালোচনা করতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েন তৃণমূল কংগ্রেসের এই নেত্রী। তিনি তখন ‘পশ্চাৎদেশে বাঁশ ঢুকানোর’ মত অশ্লীল মন্তব্য করে বসেন।
মুখ্যমন্ত্রীর এই শব্দচয়নে সমালোচনায় ফেঁটে পড়েছেন তার বিরোধী দলীয় নেতারা। কলকাতার বুদ্ধিজীব মহলও বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে গেছেন।
মাত্র দশ দিন আগে তিনি অশ্লীল শব্দ ব্যবহারের পর ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন। গত ২২ নভেম্বর দলের নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কর্মিসভায় বিজেপি নেতাদের আক্রমণ করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘কে তুমি? শালা নাম জানে না কেউ।’ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই তিনি নিজেকে শুধরে নিয়েছিলেন। প্রত্যাহারও করে নিয়েছিলেন আপত্তিকর শব্দটি । সেদিনও তিনি বিজেপি তার সরকারকে ‘বাঁশ’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
জলপাইগুড়ি স্পোর্টস ভিলেজের উদ্বোধন-অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সমালোচকদের আক্রমণ করে বলেন, ‘আজ দার্জিলিং আর জঙ্গলমহলের লোকজন শান্তিতে বসবাস করছে এটা বুঝি তোমাদের সহ্য হচ্ছে না? এখন তারা যারা কাজ করছে, সারা ক্ষণ তাদের পিছনে বাম্বু দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছেন।’ শুধু অশ্লীল শব্দচয়ন করেই ক্ষান্ত হননি মুখ্যমন্ত্রী। রসিয়ে-রসিয়ে হাতে দিয়ে ইশারাও করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিজেপির উত্থানে এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। এছাড়া গত কয়েক দিনে সাংসদ সৃঞ্জয় বসু গ্রেফতার হয়েছেন এবং মন্ত্রী মদন মিত্র সিবিআইয়ের তলব পেয়েছেন। খোদ মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। এর সঙ্গে সারদা কেলেঙ্কারীর তো আছেই। কলকাতা সভায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের সহায়তায় জঙ্গিদের কাছে অর্থপাচার হয়েছে। এসব কারণেই ক্রমেই বেসামাল হয়ে পড়ছেন নেত্রী।
তারওপর মঙ্গলবার কলকাতায় এক জনসমাবেশে কমুনিস্ট পার্টির নেতা বিমান বোস এবং সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সারদা স্কিমের অর্থ লোপাটের ঘটনায় মমতাকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানিয়েছিলেন। এতেই বাম নেতাদের ওপর ক্ষেপেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বুধবার তাদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে মমতা বলেন, ‘লড়তে পারলে লড়। করতে পারলে কর। কোথায় বলবে বাংলাকে দাও, দিল্লিতে গিয়ে বলছে সব টাকা কেটে নাও। কেউ কেউ আবার বলছে বাংলা ছেড়ে ভাগ। সাহস কত বড়… কথায় বলে বড় বাড় বেড়েছে ঝড়ে পড়ে যাবে।’
বুধবার সংবাদমাধ্যমকেও একহাত নিয়েছেন মমতা। সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা… যারা কাজ করছে তাদের পিছনে লেগে গিয়েছে!’
এ কথার পরেই তিনি বাম্বু প্রসঙ্গে যান। বাম নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন,‘নিজেরা করতে পারেনি। যারা করছে সারা ক্ষণ তাদের পিছনে কী করে বাম্বু দেওয়া যায়, তার চিন্তা করে বেড়াচ্ছে। বাম্বু জঙ্গলে হয়। ঘরবাড়ি তৈরিতে কাজে লাগে। আর জানে না, বাম্বু দিতে দিতে বাম্বু যখন তাড়া করে না সবাইকে, তখন যে কোথায় যাবে, যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না…!’
মুখ্যমন্ত্রীর এই অশালীন বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলীয় নেতারা। স্থানীয় বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, ‘এক বার হলে বলা যায় মুখ ফস্কে বেরিয়েছে। কিন্তু অল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় বার অশালীন ভাষা ব্যবহার করলে বুঝতে হবে, তিনি ওই ভাষাতে কথা বলতেই অভ্যস্ত!’ পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন,‘ তিনি একজন মুখ্যমন্ত্রী, তার ওপর নারী, তাঁর মুখে এমন ভাষা অকল্পনীয়!’
সাহিত্যিক নবনীতা দেবসেন বলছেন, ‘অনেকে ভাবেন, খারাপ শব্দ ব্যবহার করলে প্রতাপ প্রতিষ্ঠা করা যাবে। কিন্তু যাঁর সত্যিকারের প্রতাপ রয়েছে তাঁর কখনও এ সব কথা বলার দরকার পড়ে না। মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কোনও সঙ্কটের কারণে জিভের লাগাম হারিয়ে ফেলছেন।’
বুধবার তার ভাষা শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা এবং পুলিশকর্মীরাও অবাক হয়ে যান। তাদেরকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতেও দেখা গেছে। অনেকে আবার মঞ্চের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ লুকিয়ে হেসে ফেলেন।