রাজশাহী প্রতিনিধি : চলতি বছর ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়াই ছিল বিএনপির বড় ভুল। ওই নির্বাচনে মাঠে না নেমে অন্যকে গোল করার সুযোগ দিয়েছিল বিএনপির। আর সেই ভুলের কারণেই বিএনপির রাজনীতির আজ বেহাল দশা। এমনই মনে করছেন রাজশাহী বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা।
এর পাশাপাশি রাজশাহী জেলাসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গ সংগঠন চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। তার ওপরে আছে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। সবশেষে কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের জন্য দিনের পর দিন সময় পিছিয়ে নেয়ার বিষয়টি হতাশ করেছে বলে তৃণমুলের নেতাকর্মীরা জানান।
রাজশাহী বিএনপির তৃণমুলের নেতাকর্মীরা জানান, চলতি বছর ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত ছিলো বিএনপির রাজনীতির বড় ভুল। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে দিনে দিনে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়তে শুরু করেছে বিএনপি।
তারা আরো জানান, মাঝে মধ্যেই আন্দোলনের ঘোষণা আসছে। সেভাবে প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে সময় সময়। কিন্তু আন্দোলনে নামার আগে মাঠ গোছানো ও মজবুত সাংগঠনিক ভিত পুনর্গঠনের কথা বহুবার বলা হলেও সে প্রক্রিয়া থেকে দল অনেক দূরে আছে বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা। শক্ত সাংগঠনিক পরিস্থিতি ছাড়া আন্দোলন জমানো যায় না। যে কারণে দিন দিন দলটির মাঠপর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে অস্থিতা আর হতাশা বাড়ছে।
বেশির ভাগ তৃণমুল নেতাকর্মীদের অভিমত, আন্দোলনের বিষয়ে ভুল নীতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের পরে আন্দোলনের নামে বিএনপি যা করেছে তা এক কথায় লক্ষ্যহীন কার্যক্রম। আর এ কারণেই নেতৃত্বের সঙ্গে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থা দিনে দিনে লম্বা হাওয়ার কারণে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা মানসিক দিকে থেকে ভেঙে পড়ছে।
রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউনিয়নের বিএনপির সহসভাপতি কামরুজ্জামান হেনা জানান, বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের ডাক শোনা যায়। এরপরে নেতারাই পিছুটান দেয়। নেতাদের এমন অবস্থায় মাঠপর্যায়ে আন্দোলন নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এ কারণে কেন্দ্রের নেতা তো দূরের কথা মহানগর ও জেলা নেতাদের ওপরে তৃণমূলের কর্মীরা ভরসা হারিয়ে ফেলেছে।
রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর যুবদলের সভাপতি মোশারফ করিম জানান, রোজার ঈদের আগে কেন্দ্র থেকে বলা হলো ঈদের পরেই আন্দোলন, ঈদ পার হয়ে যায় আন্দোলন শুরু হয় না। এরপরে আসে কোরবানির ঈদ। সেখানেও একই কথা। ঈদ পার হয়ে যায় আন্দোলন শুরু হয় না। বারবার আন্দোলনের ডাক দিয়ে আন্দোলন শুরু না করতে পারায় কর্মীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে।
মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌর এলাকার বিএনপি কর্মী মশিউর রহমান জানান, দল যেভাবে আন্দোলনের ডাক দিয়ে পেছনে হটে আসছে, তাতে অনেক কর্মীর মনোবল ভেঙে গেছে। তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কথার ওপরে ভরসা করতে পারছে না। অনেকে দলের বিভিন্ন সভা, সমাবেশের আশাও ছেড়ে দিয়েছে।
আন্দোলন করার বিষয়ে রাজশাহী বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত হচ্ছে, আন্দোলন করতে হবে আন্দোলনের মতো। এভাবে সরকারকে যতো বেশি সময় দেয়া যাবে ততোই সরকারের অবস্থান শক্ত হয়ে যাবে। অপর দিকে মাঠ পর্যায়ে বিএনপির অবস্থানও ততো নড়বড়ে হয়ে যাবে।
তৃণমুলের নেতাকর্মীদের অভিমত, বর্তমান সরকার যতোদিন ক্ষমতায় আছে ততোদিন তাদের কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না। সে কারণে সরকারের পতনের ওপরেই জোর দিচ্ছেন তারা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রকে আরো শক্ত ভূমিকায় দেখতে চায় তারা। বর্তমান সময়ে আন্দোলনের মাঠে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পিছুটাননীতি তৃণমূল নেতাকর্মীদের ওপরে প্রভাব ফেলছে বলেও অনেকে মনে করেন।
রাজশাহী বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌর যুবদলের সভাপতি আব্দুল আলিম বাবু জানান, লাগাতার হরতাল, অবরোধের মতো শক্ত কর্মসূচি দিতে হবে। এছাড়া সরকারের ভিত নড়ানো যাবে না। ইউনিয়ন পর্যায়েও শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি ইউনিয়নের বিএনপির কর্মী সুলতান আহাম্মেদ জানান, শক্ত প্রতিপক্ষের সামনে নরম কোনো কর্মসূচি দিলে লাভ হবে না। সে কারণে আন্দোলন করতে হবে আন্দোলনের মতো।
তবে সবার আগে তৃণমূলের কর্মীরা চান রাজশাহী জেলা, থানা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটিগুলো যাতে ঢেলে সাজানো হয়। রাজশাহী জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ দুই বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। পাশাপাশি থানা ও পৌর কমিটিগুলোর মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে অনেকটাই নেতৃত্বশূন্য হয়ে আছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। কমিটি না থাকার কারণে নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে তৃণমূলে দিনে দিনে গ্রুপিং বাড়ছে। তার তাতে দলের ওপরেই প্রভাব পড়ছে বেশি। অনেক তৃণমূলের কর্মী দলের সভাগুলোতেও যোগ দেয়া ছেড়ে দিয়েছে। এ জন্য তারা আন্দোলনে নামার আগে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া কমিটিগুলো ঢেলে সাজানোর ওপরে জোর দিয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাজুবাঘা ইউনিয়নের বিএনপির কর্মী তসলিম হোসেন জানান, আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তো কোনো লাভ নেই। যদি স্থানীয় নেতারা ঠিক না থাকে তাহলে আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। রাজশাহী জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। নেতৃত্ব নিয়েও আছে কোন্দল। কমিটিগুলো পুনর্গঠন করা না হলে নেতারা যেভাবে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আছে তাদের প্রভাব তৃণমূলে পড়ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী ঋষিকুল ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গির হোসেন জানান, শুধু রাজশাহী জেলা না, সারা দেশের কমিটিগুলো যদি ঢেলে না সাজানো হয় তাহলে আন্দোলন কোনো ভাবেই শক্তিশালী হবে না। সে কারণে কেন্দ্রের উচিৎ অল্প সময়ের মধ্যে আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া কমিটিগুলো ঢেলে সাজাতে হবে। এরপরে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আন্দোলনের মাঠে নামতে হবে।