নিজস্ব প্রতিবেদক : ফুলমালার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। তিনি এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার গলার অপারেশন শুরু হবে। শনিবার দুপুরে কথা হলে ফুলমতির ভাই আবু সাঈদ ফুলমতির অপারেশনের এ তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, গত রাত থেকে অর্থাৎ শুক্রবার রাত থেকে ফুলমতির শরীর ফুলে উঠতে শুরু করেছে। তাই তার শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চিকিৎসকেরা গলায় অপারেশন করাতে বলেছেন। আর এই অপারেশনের জন্য ইতিমধ্যেই পাইপ থেকে শুরু করে সব ধরনের ওষুধও কেনা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে আইসিইউ এর চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া মিডিয়ায় কথা বলতে অসম্মতি জানান। পরে আইসিইউ এর বিভাগীয় প্রধান ডা. আব্দুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এখন অপারেশন থিয়েটারে রয়েছেন।
এদিকে ফুলমালার ছেলের আহমেদ আলীর সঙ্গে বলে জানা যায়, গত রমজানে বাথরুমে পড়ে গিয়ে ফুলমালা পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা পান। ওই সময়ে চিকিৎসার জন্য তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিলে বলা হয় অপারেশন করতে হবে। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ায় ঝুঁকির ভয়ে এতোদিন কবিরাজি চিকিৎসা করা হয়। তাতে কোনো উন্নতি না হওয়ায় তাকে নেয়া হয় যাত্রাবাড়ীর মেডিকম জেনারেল হাসপাতালে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গত ১৬ নভেম্বর যাত্রাবাড়ীর মেডিকম জেনারেল হাসপাতালে ডা. মধুসূদন পাল, ডা. আবদুল করিমসহ ৪ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে শুরু হয় ফুলমালার অপারেশন। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী চলে এ অপারেশন।
এসময় ফুলমালার ছোট ছেলে চিকিৎকদের কাছে অপারেশনের অগ্রগতি জানাতে চাইলে তারা জানান, অপারেশন করতে করতে তার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। পরে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অপারেশন করা হয়েছে। এখন তার অবস্থা খুব একটা ভালো না।
অবস্থা বেগতিক দেখে মেডিকম হাসপাতাল থেকে ফুলমতিতে বদলি করা হয় রাজধানীর গ্রিনরোডর গ্রিন কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে। কিন্তু এখানেও কোনো উন্নতি না হওয়ায় ৪ দিন পর অর্থাৎ ২১ নভেম্বর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
সেখানে শুরু হয় নানা ধরনের পরীক্ষা-নীরিক্ষা। কিন্তু ফুলমতির ছেলেরা আজও জানতে পারেননি কেন তার মাকে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। তার শারীরিক সমস্যাটি কী?
ক্ষোভ প্রকাশ করে ফুলমতির ছোট ছেলে বলেন, ‘চিকিৎসকদের প্রতিদিনই জিজ্ঞাস করি মায়ের কী হয়েছে, কেনই বা তাকে আইসিইউতে চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেন না। শুধু বলেন, অবস্থা খারাপ।’
আহম্মদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বারবারই ডাক্তারদের বলছি, আল্ট্রাসনো করাতে, কিন্তু তারা নানা সমস্যা দেখিয়ে আল্ট্রাসনো করাতে চাইছে না।’
শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মা ব্যথা পেলো পায়ে, কিন্তু ডাক্তাররা অপারেশন করলেন পেটে। এ থেকেই তো বোঝা যায় যে তারা আমার মায়ের কিডনি নিয়ে নিয়েছে অথবা অপারেশনে কোনো ভুল করেছে। যার কারণেই তারা গ্রিন কিডনি জেনারেল হাসপাতালের বিল বাবদ আমাদের ৬০ হাজার টাকা দিয়েছেন।’
এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত হতে আহম্মদ আলীর কাছ থেকে মেডিকম হাসপাতালের ডা. মধুসূদন পাল, ডা. আবদুল করিমের মোবাইল নম্বর নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক নেজামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘একটা আলট্রাসনোগ্রাম করলেই তো কিডনি কেটে নেয়া হয়েছে কি না এ প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে।’
কোনো সমস্যা না থাকলে রোগীর স্বজনদের টাকা দিয়েছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা এসেছিলেন। তারা খুবই দরিদ্র। তাই মানবিক বিবেচনায় তাদের টাকা দেয়া হয়েছে। এটাকে অন্যভাবে দেখা ঠিক হবে না।’