পুত্রাজায়া (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে হাসান রেজা : পাহাড়ের দেশ মালয়েশিয়া। দেশটির অধিকাংশ স্থানেই দেখা মিলবে ছোট বড় এবড়ো থেবড়ো পাহাড়ের। কিন্তু এই দেশটি ভ্রমণে মনে হবে যেন কোন সুনিপুণ কারিগর তার হাতের ছোঁয়ায় গড়ে তুলেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মানুষের হাতে গড়া নান্দনিকতায় মালয়েশিয়া যেন বিশ্বের আধুনিক যে কোন দেশকে হার মানায়।
দেশটির প্রশাসনিক রাজধানী গড়ে তোলা হয়েছে পুত্রাজায়ায়। একটি আধুনিক শহর কেমন হতে পারে তার অনন্য নিদর্শন এই পুত্রাজায়া। বিশ্বের অনেক দেশই বর্তমানে পুত্রাজায়াকে আধুনিক শহরের মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে।
স্যাটেলাইট শহরের আদলে গড়ে তোলা পুত্রাজায়া পুরোপুরি সবুজে ঘেরা। মালয়েশিয়া ফেডারেল সরকারের বর্তমান রাজধানী পুত্রাজায়া। মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টুঙ্কু আব্দুর রহমান পুত্রার নামানুসারে শহরটির নামকরণ করা হয়েছে বলে জানা যায়। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অফিস ও বাসস্থান এখানেই। পুত্রাজায়া শহরে ঘুরলে যে কারোরই মন জুড়ানোর পাশাপাশি এক ধরণের প্রশান্তি আসবে। বন বনানীর সবুজ ছায়ায় গড়ে তোলা হয়েছে সব রকমের আধুনিক সুয়োগ-সুবিধা সম্বলিত এই নগরী। কুয়ালালামপুর সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে মাত্র এক ঘণ্টার পথ। ট্রেন, বাস অথবা ট্যাক্সিতে করে যাওয়া যায় পুত্রাজায়ায়। তবে বাসে যাওয়াটাই সবচেয়ে ভাল। কুয়ালালামপুরসহ পুরো মালয়েশিয়াতেই রয়েছে উন্নতমানের বিলাসবহুল বাসসার্ভিস। ভাড়া হাতের নাগালের মধ্যেই। কুয়ালালামপুরের যে কোন স্টেশন থেকে পুত্রাজায়ার সেন্ট্রাল বাস স্টেশনে যেতে বাসভাড়া ৩ থেকে ৪ রিঙ্গিত। এই স্টেশন থেকে মূল শহরে আসতে ভাড়া পড়বে মাত্র আধা রিঙ্গিত। এই ভাড়া দিয়েই পুরো শহর বাসে করে ঘুরে বেড়ানো যায়। পুরো পুত্রাজায়ায় আধা রিঙ্গিতের বেশি ভাড়া নেই কোন বাসে।
পুত্রাজায়া শহরের প্রধান পাহাড়ে অবস্থিত পারদানা পুত্রায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়টি গড়ে তোলা হয়েছে অনন্য সৌন্দর্যের ছোঁয়ায়। শহরের প্রধান মসজিদ পুত্রা মস্ক দর্শনার্থীদের বিমোহিত করার জন্য যথেষ্ট। পুত্রাজায়ার স্বাধীনতা স্কয়ারটিও দেখার মতো যেখানে বিভিন্ন উৎসব ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ৩৩৫ মিটার দীর্ঘ পুত্রা সেতুটিও দর্শনীয়। এটি মনোরেল (মেট্রো রেল), যানবাহন ও পথচারী চলাচলের জন্য তিনটি আলাদা আলাদা স্তরে বিভক্ত।
এছাড়া নগরীকে সুশীতল ছোঁয়া দেয়ার জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ৬৫০ মিটারের একটি লেক যা পুত্রা লেক বলে পরিচিত। এটি বর্তমানে মালয়েশিয়ার জলক্রীড়ার প্রধান স্পটে পরিণত হয়েছে। ৬ হাজার ৮১৫ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট লেকটি তৈরি হয় ১৯৯৩ সালে। আর নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরা এ লেকটি সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৯৭ সালে। লেকটি পুত্রাজায়ার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সৌন্দর্য যেনো আরো বহুলাংশে বিকশিত করেছে, গোটা পুত্রাজায়াকেই এনে দিয়েছে এক ভিন্ন আঙ্গিক। এই পুত্রা লেক ঘেঁষেই প্রধানমন্ত্রীর অফিস, পুত্রা মসজিদ ও পুত্রা ব্রিজ। পুত্রা লেকের গ্রাউন্ড ফ্লোরে তৈরি হয়েছে নাসাকান্দার রেস্টুরেন্ট। খুব সহজে এখানে প্রবেশের জন্য আছে চলন্ত সিঁড়ি। পুত্রা লেকের উপরে প্রতিবিম্ব পড়েছে মালয়েশিয়ার বৃহত্তম মসজিদ পুত্রা মস্ক-এর। এ মসজিদে এক সঙ্গে এক হাজার মানুষ নামায আদায় করতে পারেন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে এ মসজিদে। পুত্রাজায়ার আলামান্ডায় গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক শপিং সেন্টার। মার্কেটের সম্মুখভাগে বিশালায়তনে রয়েছে পানির ফোয়ারা, বাচ্চাদের খেলার স্থান।
পুত্রাজায়ায় বাংলাদেশ থেকে ঘুরতে এসেছেন হাবিুবল আহাদ। কথা হয় তার সাথে। তিনি আক্ষেপের সুরে বললেন, আমাদের দেশের হাতিরঝিলও তো অনেক সুন্দর। কিন্তু উদ্বোধনের সময় সেই নজরকাড়া হাতিরঝিল রক্ষণাবেক্ষণ আর তদারকির অভাবে এখন সৌন্দর্যহীন। আন্তরিকতা আর দেশপ্রেম দিয়ে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার তাগিদ ঝড়ে পড়লো হাবিবুল আহাদের কথায়।