ঢাকারবিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অযোগ্যদের নেতৃত্বে রংপুর বিএনপিতে ফাটল

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ৭, ২০১৪ ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

RANGPUR-BNP02রংপুর প্রতিনিধি : কাউন্সিল ছাড়াই গঠন করা জেলা ও মহানগর কমিটিতে মূল্যায়ন হয়নি দলে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা নেতাদের। অর্থ-বাণিজ্য আর কৌশলী ম্যানেজ মিশনে অনেকেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন নতুন কমিটিতে। যাদের পদ-পদবি নিয়েই শুরু হয়েছে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব। আর এ কারণে ত্যাগী নেতাদের অনেকেই চলে গেছেন পর্দার আড়ালে। রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের বড় একটি অংশ চলে গেছে নতুন কমিটির বিপক্ষে। কর্মসূচিতে পালনে জোরালো ভূমিকা না থাকায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে জেলা ও মহানগর বিএনপি। প্রত্যাশিত পদ বঞ্চিত নেতারা বলছেন, যোগ্যদের কাঙ্ক্ষিত পদ না দেয়ায় দলে ফাটল দেখা দিয়েছে। এ কারণে আগের মতো সরব উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন সম্ভব হচ্ছেনা। অন্যদিকে নতুন কমিটির নেতাদের দাবি, কমিটি নিয়ে মান অভিমান থাকলেও রংপুর বিএনপিতে কোনো গ্রুপ নেই।
কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অনুমোদিত কমিটির ৬ মাস পার হলেও এখানো নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব নিয়ে গোস্যা কমেনি রংপুর বিএনপিতে। বরং নতুন কমিটির প্রত্যাশিত পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে জেলা ও মহানগর বিএনপিতে দিন দিন বাড়ছে দূরত্ব।
একদিকে সমন্বয়হীনতা অন্যদিকে সময় মতো কমিটি গঠন করতে না পারায় তৃণমূলেও দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ। এ পরিস্থিতিতে রংপুর বিএনপিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে ফাটল রেখা।
দলীয় সূত্রমতে, দীর্ঘ প্রায় দশ বছর পর গেল ৬ জুন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। কাউন্সিল ছাড়াই এ কমিটি গঠনে নেতাদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ, দ্বন্দ্ব। প্রত্যাশিত পদ না পেয়ে অনেক নেতাই কেন্দ্র মনোনীত কমিটির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নেন। কাঙ্ক্ষিত পদ বঞ্চিতরা নেমে আসে রাজপথে। কাঙ্ক্ষিত পদ দাবি করে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি।
এসব কারণে রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক রহিম উদ্দিন ভরসার স্ত্রী মমতাজ শিরিনের সঙ্গে তার সৎ ছেলে নবগঠিত কমিটির জেলা সভাপতি এমদাদুল হক ভরসার দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। মাঠে শুরু হয় দুই গ্রুপে সংঘর্ষ। উভয় গ্রুপের দলীয় আয়োজন ভণ্ডুল করতে চলে ককটেল হামলা। পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরে মামলা দায়েরও করা হয়। দ্বন্দ্ব-বিভক্তি নিয়ে রংপুর বিএনপিতে বড় আকারের ফাটল দেখা দেয়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনে কোনো তৎপরতা নেই।
এদিকে, কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে অতীতে দলীয় কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা নেতাদের অনেকেই চলে গেছে পর্দার অন্তরালে। এতে নতুন কর্মসূচিতে ভাটা পড়েছে। চোখেও পড়ছে না শক্তির মহড়া। রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের বড় একটি অংশ অবস্থান নিয়েছে নতুন কমিটির বিপক্ষে। কর্মসূচিতে পালনে জোরালো ভূমিকা না থাকায় দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে জেলা ও মহানগর বিএনপি।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা নেতাদের কোনো মূল্যায়নই করা হয়নি কাউন্সিল ছাড়াই গঠিত নতুন কমিটিতে। বরং অর্থ বাণিজ্য আর কৌশলী ম্যানেজ মিশনে অনেকেই উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন নতুন কমিটিতে। যাদের পদ পদবি নিয়েই নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত।
জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও কাঙ্ক্ষিত পদবঞ্চিত নেতা শহিদুল ইসলাম মিজু বলেন, ‘অযোগ্য নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠন করায় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। একারণে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মী সমর্থকদের বৃহৎ একটি অংশ কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করেছে’।
এসময় তিনি সবার মতামতের ভিত্তিতে পুণরায় কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রয়োজন বলেন মন্তব্য করেন।
প্রত্যাশিত পদ বঞ্চিত নেতা ও জেলা যুবদল সভাপতি রইচ আহম্মেদ বলেন ‘জেলা কমিটিতে যোগ্য নেতা নেই। যোগ্য ব্যক্তিদের সম্মানজনক পদ না দেয়ায় দলে ফাটল দেখা দিয়েছে। একারণে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আগের মতো সরব উপস্থিতিতে পালন করা সম্ভব হচ্ছে না।’
অন্যদিকে, নতুন কমিটির নেতারা এখনো গুছিয়ে নিতে পারেননি দলকে। সাংগঠনিক কার্যক্রম সচল রাখতে উপজেলা ও থানা পর্যায়েও দাঁড় করাতে পারেনি শক্ত কমিটি। বরং উপজেলা পর্যায়েও নতুন কমিটির নেতৃত্ব নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট ক্ষোভ আর হতাশা।
একই অবস্থা মহানগরের ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটিতে কমিটি গঠন করা হলেও বাকি রয়েছে অনেকগুলো। আবার কোথাও কোথাও কমিটিতে নেতার নাম থাকলেও মাঠে দেখা মিলছে না তাদের। বরং দীর্ঘদিন থেকে কমিটি না থাকায় এবং গ্রুপিংয়ের কারণে পীরগঞ্জে সাইফুল গ্রুপের ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিউর রহমান মণ্ডল মিলন কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। সেখানে সাবেক এমপি নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও সাইফুলের মধ্যে বিরোধের জের ধরে বিএনপির অবস্থা নাজুক। একই অবস্থা সদর উপজেলা বিএনপিতেও।
দীর্ঘদিনও পুনর্গঠন না হওয়ায় পুরাতন কমিটি নিয়েই দল চালাতে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রংপুর সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান আলী মিয়া। তিনি বলেন, ‘রংপুরে একসময় বিএনপির শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, বিভক্তির কারণে সে শক্তি এখন আর নেই’।
নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর কমিটি গঠন নিয়ে এমন পরিস্থিতিতে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি এখন যেন নড়বড়ে অবস্থানে। তবে এসব অভিযোগের পাত্তা নেই নবগঠিত কমিটির সিনিয়র নেতাদের কাছে।
নবগঠিত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার মতে, ‘কারো জন্য বিএনপি পিছিয়ে থাকবে না। বরং দিন দিন বিএনপি বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে এসে এখন বেশি সুশৃঙ্খল হয়ে উঠেছে। এতে করে দুর্বল নয় বরং বিএনপি আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি শক্ত অবস্থানে’।
মহানগর বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘রংপুর বিএনপিতে কোনো গ্রুপ নেই। তবে কমিটি নিয়ে কারো কারো মান অভিমান রয়েছে। যারা গ্রুপিয়ের কথা বলেছেন, তারাও তো কমিটিতে রয়েছেন।’
শিগগিরই কমিটি নিয়ে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের অবসান হবে দাবি করে মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘বর্তমান জেলা কমিটিতে ১০১ জন এবং মহানগর কমিটিতেও ১০১ জন রয়েছে। পরবর্তী সময়ে জেলাতে ৫০ এবং মহানগরের আরো ৭০ জন সদস্য বৃদ্ধি করা হবে।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘দলের কাজ ঠিকমতোই চলছে। বরং আগের তুলনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন অনেক বেশি গতিশীল। আমরা আগামী নির্বাচনে ৬টি আসনে জয়ের ব্যাপারে পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছি।’
জেলা ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নির্দেশ ও ইন্ধনে গুটি কয়েকনেতা কাঙ্ক্ষিত পদের অজুহাতে বিএনপিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলো দাবি করে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সামছুজ্জামান সামু বলেন, ‘রংপুর বিএনপিতে কোনো বিভক্তি নেই। অতীতে যাদের কোনো আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায়নি তাদের অনুসারি কিছু নেতাকর্মী বিরোধীতা করেছে। এখন তারা আর মাঠে নেই।’
জেলা বিএনপির সভাপতি ইমদাদুল হক ভরসা বলেন, ‘আমাদের মা-ছেলে নিয়ে এতো লেখা লেখি করে কি লাভ? এক বছর আগে কী হয়েছিল সেটা নিয়ে এখন নিউজ কেন? এখন বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা কেন্দ্রের নির্দেশনা মতো চলছি। দল পুনর্গঠনে কাজ চলছে।’
এ ব্যাপারে থেকে যোগাযোগ করা হলে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান, ‘রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সকল মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের জন্য। চলতি মাসের মধ্যেই মহানগরের সকল ওয়ার্ড কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শেষ হবে।’