ঢাকারবিবার , ৭ ডিসেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভালো করছে না নতুন ব্যাংক

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ৭, ২০১৪ ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Bank logoনিজস্ব প্রতিবেদক : সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে সাফল্য নেই বললেই চলে। পাশাপাশি বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্স আহরণেও পেছনের তালিকায়। এসএমই ও কৃষিঋণে পুরো ব্যর্থ। লাইসেন্স পাওয়ার দেড় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভালো কিছু করতে পারছে না নতুন ব্যাংকগুলো।
তবে নতুন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পুরনো ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক। কিন্তু নতুন ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বিনিয়োগের মন্দাভাব ব্যাংকগুলোর জন্য সমস্যা তৈরি করছে। এ মন্দাভাব কেটে গেলে ব্যাংকগুলো ভালো করবে বলে তারা আশা করেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কার্যক্রমে আসে প্রবাসীদের মালিকানায় তিনটিসহ ৯টি নতুন ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক এবং মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া সর্বশেষ তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেঘনা ব্যাংকের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৭৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, মিডল্যান্ড ব্যাংকের ৫৪৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ফারমার্স ব্যাংকের ৮০১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংকের ৭১৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ৭৯১ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম আমানত রয়েছে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেডের। ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ৫১৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর সবচেয়ে বেশি আমানত জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের। এই ব্যাংকটির মোট আমানতের পরিমাণ ২ হাজার ৩৭৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে আবার সরকারের কাছ থেকে নেওয়া আমানতের পরিমাণ ৫১৮ কোটি টাকা।
আমানত সংগ্রহের দিক দিয়ে এরপর রয়েছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। এই ব্যাংকের মোট আমানত হচ্ছে এক হাজার ৫০৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এরপর সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ এক হাজার ২৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
নতুন এ ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানত থেকে ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটি তাদের আমানতে ৭৩ দশমিক ১১ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিয়েছে। আর ঋণ বিতরণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে মধুমতি ব্যাংক। তারা তাদের আমানতের মাত্র ৩৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
এছাড়া, এনআরবি ব্যাংক ৭২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ফারমার্স ব্যাংক ৭০ দশমিক ৫৬ শতাংশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ৬৮ দশমিক ১০ শতাংশ, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেড ৬৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৬১ দশমিক ৮৯ শতাংশ, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৬১ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং মেঘনা ব্যাংক ৫৫ দশমিক ৯১ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) এসএমই খাতে মোট ২ লাখ ৬১ হাজার ১৮ জন উদ্যোক্তাদের মাঝে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৪৭ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক এসএমই খাতে কোনো ঋণই দিতে পারেনি। এই পাঁচটির মধ্যে তিনটিই হচ্ছে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবরে) কৃষি খাতে তফসিলভুক্ত ৫৬টি ব্যাংক মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৩ হাজার ৮৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। তবে এ সময়ে কৃষিখাতে বিদেশি ও নতুন দুটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার শূন্যের কোঠায়। নতুন এ দুটি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ফারমার্স ও এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড। মেঘনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সাউথ বাংলা ব্যাংকের ঋণ বিতরণের হার ৪০ শতাংশের নিচে। নতুন নয়টি ব্যাংকের মোট কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ ৮ কোটি ৯৯ লাখ।
নতুন ব্যাংকগুলোর পরিস্থিতি নিয়ে গত সর্বশেষ বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান কৃষি ঋণ না দেওয়ায় নতুন ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসময় তিনি নতুন ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ না করলে শাখা খোলার লাইসেন্স দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করেন। কিন্তু বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।
বিদেশী বিনিয়োগ ও প্রবাসী উদ্যোক্তাদের বৈধভাবে রেমিটেন্স পাঠানোর লক্ষ্যে ৩টি এনআরবি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়। এনআরবি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী।
সর্বশেষ অক্টোবরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১০১ কোটি ৭ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। যেখানে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ডলার ছাড়া বাকি ৮টি ব্যাংক কোন প্রকার রেমিট্যান্স আনতে পারেনি। এমনকি প্রবাসী আয় বাড়াতে অনুমোদনপ্রাপ্ত তিন এনআরবি ব্যাংকও এ খাতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। যাদের রেমিটেন্স আহরণ শূন্য।
এ ব্যাপারে নতুন অনুমোদন পাওয়া মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক সভাপতি মো. নূরুল আমিন বলেন, পুরনো ব্যাংকের তুলনায় নতুন ব্যাংকের সমস্যা কম। নতুন ব্যাংকগুলোতে এখনও খেলাপি ঋণ তৈরি হয়নি। তবে এসব ব্যাংককে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য নতুন ব্যাংকগুলোকে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর শাখা অনেক কম। এ কারণে তাদের আমানত সংগ্রহের পরিমাণও কম। তাই তারা ঋণ বিতরণে সতর্কতা অবলম্বন করছে। বেশি সুদে আমানত সংগ্রহ ও কাঙ্খিত ঋণ বিতরণ করতে না পারায় অনেক ব্যাংক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য কোনো কোনো ব্যাংক এগ্রেসিভ ঋণ বিতরণ করারও ঝুঁকি নিতে পারে বলে মনে করেন তিনি। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকে নতুন ব্যাংক সম্পর্কে কঠোর নজরদারি অব্যহত রাখতে হবে বলে তিনি জানান।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠনের সাবেক এ সভাপতির মতে, সব মিলিয়ে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ইতিবাচক নেই। এ কারণে নতুন ব্যাংকগুলো কিছুটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এ সমস্যা বেশিদিন থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।