গেন্টিং (মালয়েশিয়া) থেকে ফিরে হাসান রেজা : পর্যটকদের মন ভরাতে অপার সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে রেখেছে আধুনিক মালয়েশিয়া। প্রকৃতি যেন নানান বৈচিত্র্য নিয়ে সেজেছে এখানে। পাশাপাশি অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশটির প্রতিটি স্থান গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটক আকৃষ্ট করে।
মালয়েশিয়ার সব থেকে উঁচু স্থান গেন্টিং হাইল্যান্ড। এ দেশের সরকার গেন্টিংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে গড়ে তুলেছে বিশাল এক বিনোদন কেন্দ্র। ভূমি থেকে ছয় হাজার মিটার উঁচুতে হলেও পর্যটকদের বিনোদনের সকল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এখানে। মালয়েশিয়ার দামি-দামি শপিং মল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সব কিছু আছে এখানে। এটি শিশুদের অন্যতম প্রিয় স্থান; কারণ এখানে শতাধিক প্রকারের রাইড আছে। এখানে আছে থিম পার্ক ও ভূতের আড্ডা। ভূতের বেশ ধারণ করে অন্যকে ভয় দেখাতে মজা পায় এই কৃত্রিম ভূতের দল। গেন্টিং হাইল্যান্ডের অন্যতম বড় আকর্ষণ ক্যাসিনো। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে জুয়াড়িরা আসেন এখানে জুয়া খেলতে। তবে ২৫ বছরের কম বয়সী ও মালয়েশিয়ান মুসলমানদের জন্য ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ।
এখানে রয়েছে হোটেল গেন্টিং গ্র্যান্ড, ভিআইপি হোটেল, হোটেল ম্যাক্সিমাস ও পৃথিবীখ্যাত হোটেল ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড। ২০০৩ সালে এটি নির্মিত হয়। সমতল ভূমি থেকে গেন্টিং হাইল্যান্ডের উচ্চতা প্রায় ছয় হাজার মিটার। কুয়ালালামপুর থেকে বাসে করে এক ঘণ্টার পথ। বিলাসবহুল বাসে ভাড়া মাত্র ৪ থেকে ৫ রিঙ্গিত জনপ্রতি। পথে কোন ট্রাফিক সিগন্যালের মুখোমুখি হতে হবে না। কুয়ালালামপুর থেকে গেন্টিং পর্যন্ত পুরো সড়কই ছোটবড় পাহাড় বেষ্টিত। এই পথকে পাহাড় যেন পরম মমতায় আগলে রেখেছে। চলতি পথে পাহাড় ঘেঁষা সড়কে একটু ভয়ও পেতে পারেন আপনি। পুরো পথের পাশেই পাহাড় ও গভীর অরণ্য। উঁচু উঁচু পাহাড় ও অরণ্যের বুক চিরে যেন বহমান নদীর মতো এঁকে বেঁকে বয়ে চলে গেছে এই মহাসড়ক।
পাহাড় ঘেরা পথ বেয়ে পর্যটকরা পৌঁছান গেন্টিং হাইল্যান্ডের পাদদেশে। এখান থেকে আরো ছয় হাজার ফুট দূরে অবস্থান গেন্টিং হাইল্যান্ডের। ওখানে পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যম ক্যাবল (ঝুলন্ত) কার। এতে করে যাওয়া আসার জন্য ৬ রিঙ্গিত করে ১২ রিঙ্গিত গুণতে হয় দর্শনার্থীদের। ক্যাবল কারে ওঠার জন্য ট্রেনের মতো লাইন ধরতে হয়। এক সঙ্গে পাঁচ/ছয় জন করে ওঠা যায়। ক্যাবল কারটি ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠতে থাকে। ক্যাবল কারের নিচে পাহাড়ের মাথায় খেলা করে মেঘের ভেলা। মেঘের এই ভেলা ভেদ করে ক্যাবল কারের পথচলা। নিচে তাকালে আতঙ্কিত হতে হয়। কারণ ক্যাবল কারের নিচে দুই পাহাড়ের গায়ের মাঝখানে গহীন জঙ্গল। এ ছাড়া মেঘ ঢেকে রেখেছে পাহাড়ের সবুজ বনকে। সব মিলিয়ে পর্যটকরা অজানা আতঙ্কের সাথে উপভোগ করেন অনাবিল সৌন্দর্যের।
কখনও আবার মেঘ এসে ক্যাবল কারকে ঢেকে দেবে। ক্যাবল কারে ওঠার সময় হালকা গরম অনুভব করলেও উঁচুতে পৌঁছালে শীতল হাওয়া অনুভূত হবে। হাইল্যান্ডে উঠলেই ছোঁয়া যায় মেঘবালিকাকে। এখানে মেঘে ভিজতে পারেন পর্যটকরা। ক্ষণে ক্ষণে শরীরে দোলা দিবে কালো ও সাদা মেঘের ভেলা। এখানে রোদ ও মেঘের খেলা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। হাইল্যান্ডে উঠতে গিয়ে এক ধরণের ভয় অনুভব করলেও এতে তীব্র ভালোলাগার অনুভূতি জাগে।
প্রতি বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক দেখতে আসেন গেন্টিং হাইল্যান্ডের সৌন্দর্য। বাংলাদেশ থেকেও পর্যটকরা আসেন গেন্টিং হাইল্যান্ডে। বলা হয়ে থাকে, মালয়েশিয়ার পর্যটন খাতের সবচাইতে বড় আয় আসে এই গেন্টিং থেকে।
গেন্টিং হাইল্যান্ডে এখনও অবকাঠামোগত কিছু কাজ চলছে। এখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ করছেন অনেক বাংলাদেশি। কথা হয় সিরাজগঞ্জের জিয়াউর রহমানের সাথে। মালয়েশিয়ায় তিনি বসবাস করছেন প্রায় সাত বছর ধরে। গত দুই বছর ধরে কাজ করছেন গেন্টিং-এ। বাংলাদেশি পরিচয় পেয়ে খুব উৎফুল্ল মনে হলো তাকে। জানালেন, নিজের কথা, পরিবারের কথা। আরো বললেন, মালয়েশিয়াতে অল্পসংখ্যক বাংলাদেশি ভালো অবস্থানে থাকলেও বাদবাকিরা শ্রমজীবী। তবে গর্বের সাথে জানালেন, আধুনিক মালয়েশিয়ার ৫০ ভাগ কাজই বাংলাদেশিদের হাতে গড়া।