আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিগত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার অস্ত্র বাজারে ব্যাপক মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউক্রেন ও সিরিয়া ইস্যুতে ইউরোপ ও আমেরিকা রাশিয়ার উপর যে বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার জের ধরেই এই মন্দা পরিস্থিতি। তবে মজার বিষয় হলো, আর্জেন্টাইন বিপ্লবী চে গুয়েভারা থেকে শুরু করে ওসামা বিন লাদেনের হাতে যে রাশান অস্ত্র কালাশনিকভ শোভা পেত, সেই অস্ত্রের এমন করুন পরিনতির পেছনে সত্যিকারের কারণ কি?
রাশিয়ার সেনাবাহিনী প্রতিবছর নিজেদের উৎপাদিত অস্ত্র বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। যে মুনাফার অর্থ থেকে তারা দেশের অভ্যন্তরে চেচেন বিদ্রোহী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠিগুলোকে দাবিয়ে রাখে। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, প্রতি বছর রাশিয়া শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাছেই দুই লাখ কালাশনিকভ বিক্রি করে। তবে গত জানুয়ারি থেকে গোটা ইউরোপের বাজারে একটাও কালাশনিকভ রাইফেল বিক্রি হয়নি বলে জানা যায়।
এবিষয়ে কালাশনিকভের প্রধান আলেক্সেই ক্রিভোরুচেকো ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে জানান, ‘অবশ্যই আমি মর্মাহত, কারণ আমি বুঝতে পারছি না কেন তারা আমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের অন্যতম বাজার। আমরা দীর্ঘদিন চেষ্টার ফলে এই বাজার ধরেছি। এটা একটা বিরাট ক্ষতি। এছাড়া অন্যকিছু আসলে বলার নেই।’
কালাশনিকভ কোম্পানি শুরুর দিকে ব্যক্তিমালিকানায় ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময় রাশিয়ার সরকার এই কোম্পানটির ৫১ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়ে গোটা প্রতিষ্ঠানটিকেই স্বায়ত্বশাসিত করে নেয়। যে কারণে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আঘাত সরাসরি এই অস্ত্র কোম্পানির উপর এসেছে। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মস্কো থেকে দুই ঘণ্টার দূরত্বে জিভেস্ক নামক এলাকার একটি কারখানায় এখনও প্রতিদিন প্রায় ২০০ মডেলের কালাশনিকভ রাইফেল উৎপাদিত হচ্ছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমান অস্ত্র কোথায় এবং কখন বিক্রি করা হবে সেব্যপারে সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হচ্ছে না।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই সময়ে প্রতিবছর সোভিয়েত সেনাবাহিনী ছয় লাখ কালাশনিকভ রাইফেল উৎপাদন করতো। কিন্তু গত বছর থেকে এর সংখ্যা অনেক কমেছে। বর্তমানে প্রায় দশ ভাগের একভাগ রাইফেল উৎপাদন করে রাশিয়া, যাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই সিভিলিয়ান আর্মস। সম্প্রতি কালাশনিকভের পক্ষ থেকে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিষদ নতুন করে সাজানোর কথা হচ্ছে। ইউরোপের বাজার বাদ দিয়ে এশিয়ার বাজারের দিকে অস্ত্র বাজার প্রসারিত করার জন্য সরকারের কাছে দেনদরবার করছেন কোম্পানিটির ৪৯ শতাংশ শেয়ারমালিকেরা।
আর এশিয়ার বাজার ধরার জন্য সম্প্রতি মস্কোতে একটি রেড কার্পেট সভার আয়োজন করা হয়েছিল। যেখানে কালাশনিকভের নতুন সংযোজনের রেপ্লিকা তুলে দেয়া হয়। সভায় জানানো হয়, এশিয়ার বাজারে কালাশনিকভ উন্মুক্ত হলে এর কারিগরী মান এবং অন্যান্য বিষয়াদির উন্নয়ন করা হবে। মূলত শীতল যুদ্ধের সময়েই রাশিয়া তার উৎপাদিত অস্ত্র বর্হিদেশে বিক্রি করতে শুরু করে। যার ফলাফল আমরা এখন খোদ রাশিয়াতেই দেখতে পাই। ইউক্রেন ও রাশিয়ার খণ্ডযুদ্ধে দুপক্ষই রাশিয়ার নির্মিত অস্ত্র ব্যবহার করছে।