নিজস্ব প্রতিবেদক :
অনেক ঘটা করে ঘোষিত ‘সিনিয়র সিটিজেন’ সুবিধা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের বয়োজ্যেষ্ঠ এসব নাগরিকের জন্য ‘বিশেষ পরিচয়পত্র’ তৈরির দায়িত্ব নিতে নারাজ নির্বাচন কমিশন। আর এ কারণে ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ এর সুবিধা।
গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ব প্রবীণ দিবসে অনেকটা ঘটা করেই ৬০ বছর ও তার অধিক বয়সীদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ ঘোষণা দেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হোসেন মোল্লা জানান, দেশের ১ কোটি ৩০ লাখ জ্যেষ্ঠ নাগরিককে এ সুবিধার আওতায় আনা হবে। এজন্য তাদেরকে দেয়া হবে ভিন্ন রঙের বিশেষ পরিচয়পত্র অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রে তাদেরকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হবে। যা ব্যবহার করে জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা সব ধরনের পরিবহনে কম ভাড়ায় যাতায়াত, হাসপাতালে সাশ্রয়ী মূল্যে আলাদা চিকিৎসাসেবা, আলাদা বাসস্থান সুবিধাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন। এছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, ট্রেন বা বাসের টিকিট ক্রয়, চিকিৎসা, বয়স্ক ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন বিশেষ এ পরিচয়পত্রের বাহকরা।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও সমস্যা তৈরি হয়েছে বিশেষ এই পরিচয়পত্র নিয়েই। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে পরিচয়পত্র তৈরির অনুরোধ জানালেও তারা আপাতত এ দায়িত্ব নিতে নারাজ।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ বলেন, ‘প্রবীণদের জন্য আলাদা করে পরিচয়পত্র দেয়ার বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনায় নেই। এখন মন্ত্রণালয় বা সরকার যদি আলাদা কার্ড দিতে চায় তারা সেভাবে করবে। এ নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা নেই।’
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, দেশে মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯১ সালে প্রবীণদের সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। ২০১১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় এক কোটি ১৩ লাখে। বর্তমানে এ সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। আগামী ২০৫০ সালে প্রবীণদের সংখ্যা বেড়ে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হবে।
জানা যায়, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭০ বছর। এ অবস্থায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক সুরক্ষা ও সার্বিক কল্যাণে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ এর খসড়া অনুমোদন করে সরকার। নীতিমালার ৮(১) ধারায় প্রবীণদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি উল্লেখ ছিল। নীতিমালা বাস্তবায়নে জাতীয় অধ্যাপক ডা. এম আর খানকে সভাপতি করে ১০ সদস্যের একটি কোর কমিটি গঠন করা হয়। সে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
হোসেন মোল্লা জানান, প্রবীণরা সাধারণত হৃদরোগ, ডায়াবেটিকস ও আর্থ্রাইটিসে বেশি ভুগে থাকেন। কোর কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এসব রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে হাসপাতালগুলোতে ‘জেরিয়েটিক মেডিসিন’ বিভাগ চালু করা হবে। এ জন্য আমরা ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দও পেয়েছি। প্রবীণদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে ৯০টি বড় হাসপাতালকে এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে। বয়স্ক নাগরিকরা সেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে সব ধরনের সেবা পাবেন।