নিজস্ব ডেস্ক : সারাদেশে শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। গত কয়েকদিন ধরে মানুষ শীতের দাপটে একেবারে কাবুপ্রায়। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছরের মতো এবার যেন একটু বেশিই শীত পড়েছে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় শীতজনিত কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় চিকিৎসাধীন এক শিশুসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে বলে আমাদের প্রতিনিধি জানায়।
আজ ঈশ্বরদীতে এ মওসুমের সবচেয়ে কম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকাতেও চলছে শীতের দাপট। শুক্রবার সকালে ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ছিল ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বাতাসের কারণে কুয়াশা কিছুটা কমে গেছে। তবে কুয়াশার ভাব কেটে যেতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগবে।
এছাড়া বগুড়ায় বৃহস্পতিবার চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩, সর্বোচ্চ ছিল ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
উত্তর ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে পাঠানো প্রতিবেদন-
চুয়াডাঙ্গা: শীতজনিত কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক শিশুসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শুক্রবার ১৪ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ২৯ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। যাদের মধ্যে ১৮ জন ডায়রিয়া এবং ১১ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় হতদরিদ্র মানুষরা বিপাকে পড়েছেন।
কুড়িগ্রাম: নদ-নদী বেষ্টিত ও সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা নামার আগেই ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে গোটা জনপদ। বৃষ্টির মতো ঝরঝর করে পড়ছে কুয়াশা। দিনভর সূর্যের দেখা না মেলায় বিপাকে পড়েছে মানুষজন।
শীতের সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন গরম কাপড়ের অভাবে পড়েছে চরম দুর্ভোগে। খেটে খাওয়া মানুষজন কাজে যেতে না পাড়ায় খাদ্য সংকটে ভুগছে। রেহাই পাচ্ছে না গবাদি পশু পাখিরাও।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র তীরের আসমা বেগম জানান, বাবা গরম কাপড় নাই। খুব ঠাণ্ডা পড়ছে। কাজ করতে পারি না। কেউ কম্বল সাহায্য কিছুই দেয় নাই।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, আমার এলাকার বেশিরভাগই চর। এখানকার মানুষ খুবই দরিদ্র। খাবার জোটাতেই তারা হিমশিম খায়। গরম কাপড় কেনার টাকা তাদের নেই। চলতি শীতে শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে কম্বল ও সাহায্য পাওয়া যায়নি।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আতিকুর রহমান জানায়, কুড়িগ্রাম অঞ্চলের তাপমাত্রা ১৪ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।
হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে শীত জনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা শীতজনিত রোগে।
শীতার্ত মানুষের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ৮ হাজার কম্বল বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
জেলা প্রশাসক এবিএম আজাদ জানান, শীতার্তদের জন্য আরো ১০ হাজার কম্বলের বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ: হঠাৎ করেই ঝিনাইদহে জেঁকে বসেছে শীত। একদিন আগেও যেখানে খুব বেশি শীত অনুভূত হয়নি সেখানে শুক্রবার ভোর থেকে হঠাৎ করেই শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ফলে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
গরীব মানুষরা শহরের নামী-দামী দোকানে যেতে না পেরে রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে শীতের জন্য গরম কাপড় সংগ্রহ করছেন। শীত বেশি পড়ায় রাস্তার পাশে শীতের গরম কাপড় বিক্রির দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় ও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর যারা একদমই শীতের কাপড় কিনতে পারছেন না তাদের কাছে আগুনই একমাত্র ভরসা।
আবহাওয়া অফিস জানায়, এ মাসের শেষের দিকে ঝিনাইদহসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা আছে। তারই পূর্বাভাস হিসেবেই হয়ত হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
ঝিনাইদহে বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের গতি বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। দিনভর সূর্য না ওঠায় সন্ধ্যার পর শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। হঠাৎ শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বিশেষ করে বস্ত্রহীন ছিন্নমূল মানুষরা শীতের তীব্রতায় কাবু হয়ে পড়েছে। শীতের এই তীব্রতা অব্যাহত থাকলে এসব দরিদ্র মানুষের জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে।
কালীগঞ্জ উপজেলার রাস্তার পাশের ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকানদার শাহিনুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার থেকে বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে। শীত বেশি পড়লে আমাদের বেচাকেনাও খুব ভালো হয়। সব সময় ভিড় লেগেই আছে।
ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও জেলায় তীব্র শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। প্রকৃতি ঢাকা পড়ছে ঘন কুয়াশায়। এই শীতে ছিন্নমূল মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধদের পোহাতে হচ্ছে বাড়তি দুর্ভোগ।
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, জেলায় পড়তে শুরু করেছে অতিরিক্ত শীত। কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ায় মহাসড়কে যানচলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। ভারি যানবাহনগুলোকে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। তীব্র শীত ও কুয়াশাকে ভেদ করে চলাচল করতে সাধারণ মানুষকে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
এই শীতে সাধারণ দরিদ্র মানুষকে শীতবস্ত্রের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উষ্ণতা পেতে অনেককেই খড় জ্বালিয়ে কিংবা চায়ের দোকানের উনুনে হাত গরম করতে দেখা যাচ্ছে। শীতের তীব্রতার কারণে ঠাণ্ডা, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, হাঁপানিসহ নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
তীব্র শীতেও থেমে নেই জীবনযাত্রা। কর্মের সন্ধানে কর্মজীবীরা গায়ে গরম পোশাক পরে ছুটে চলেছেন। এবার বিপণি বিতানগুলোতে শীতের কাপড়ের দাম কিছুটা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেশি।