নিজস্ব প্রতিবেদক : সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম বলেছেন, ‘দেশে গুম, খুন, অপহরণ, সহিংসতা, অমানবিক পাশবিকতার মাত্রা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এখন সরকারি আমলাদের রাজনৈতিক ডিএনএ টেস্ট করে পদোন্নতি হয়। ক্ষমতাসীনরা অন্যায় কাজের মদদদাতা হিসেবে অবতীর্ণ হওয়ায় আইনের শাসন ও মানবাধিকার আজ হুমকির মুখে।’
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস প্রক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ পরিষদ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
‘ব্রিটিশ আমলে দেশ চলত শাসনে, পাকিস্তান আমলে শোষণে আর এখন দেশ চলছে ভাষণে’ এমন মন্তব্য করে মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘বর্তমানে শুধু আশা-ভরসার ভাষণ দিয়ে দেশ চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে সুশাসন এবং সুবিচারের লেশমাত্র নেই। এখানে জনগণ নয় টাকার জোর, সামাজিক অবস্থান এবং পেশিবলকে ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভুলে যাবেন না, আপনারা যা করছেন অন্যজন ক্ষমতায় এলে তা সুদে আসলে আপনাদের ফেরত দেবে। আমার বিশ্বাস, ভাষণ বাদ দিয়ে আপনাদের দুর্নীতির অর্ধেক যদি কমানো যায়, তাহলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। কারণ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে আপনারা কাজ করবেন না। কাজ করবে দেশের কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিকসহ প্রবাসী বাঙালিরা। তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং এখন পর্যন্ত যতটুকু অর্জন তাদের কারণেই।’
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা এবং বিশিষ্ট কলামিস্ট কাজী সিরাজ বলেন, ‘মানুষ যখন নিজের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অন্যের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয় তখনই সেটা মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্যই বাংলাদেশের জন্ম হলেও স্বৈরশাসকের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পদদলিত করা হয়েছে। বর্তমানেও ক্ষমতা দখলের জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গত ৩ মাসে ৭৯ জনকে গুম করা হয়েছে। গত বছর সাড়ে চার হাজার বিচাবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। মূলত দেশের রাজনীতি দু’পরিবারের মধ্যে আবদ্ধ হওয়ায়ই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। বিরোধী দলও নিশ্চিত নয় যে তারা ক্ষমতায় আসলে একই কাজ করবে না, তাই তারাও কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবগুলো কৌশলই অনায়াসে সরকার প্রয়োগ করে যাচ্ছে।’
বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর মহাসচিব মো. শাহজাহান বলেন, ‘দেশে এখন মানবাধিকার নেই, আছে শুধু পুলিশ অধিকার। একটি মামলায় ৫-১০ হাজার আসামি করে পুলিশকে আটকবাণিজ্য করার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। যাকে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে টাকা আদায় করছে। দেশ ডিজিটালের এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মানুষের আর নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের জন্য কাঁদার অবকাশ নেই, কাঁদে লাশ ফিরে পাওয়ার জন্য।’
আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান নুরুল হুদার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শারমীন সুলতানা, সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তাসনীম রানা, প্রফেসর ড. রমিজ আজাদ প্রমুখ।