নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এদিন বিনয় এবং শ্রদ্ধায় জাতি সেসব বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে।
রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর যখন জাতি বিজয়ের আনন্দে উদ্ভাসিত, তখনই খবর আসতে থাকে, বধ্যভূমিগুলোয় বুদ্ধিজীবীদের ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়া যাচ্ছে। বিজয়ের আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। তবে, ২৫ মার্চ থেকেই বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছিল। অপারেশন সার্চলাইটের বিভীষিকাও কেড়ে নিয়েছিল বুদ্ধিজীবীদের প্রাণ।
কেন এই মানুষদের হত্যা করার জন্য বেছে নিয়েছিল এই পাকিস্তানি বাহিনী ও আল বদররা? এ প্রশ্নের উত্তর আমরা খুব সহজেই দিতে পারি, যাদের হত্যা করা হয়েছিল তারা সবাই ছিলেন মেধাবী। দেশ গড়ার ভাবনা ছিল তাদের। বাংলা ও বাঙালির প্রতি ছিল তাদের অগাত বিশ্বাস। শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এরা ছিলেন সোচ্চার। তারা স্বপ্ন দেখতেন একটি সুখী-সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাংলাদেশের। আর এ জন্যই হয়তো শহীদ হতে হলো দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, যাদের আমরা হারিয়েছি স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত: অধ্যাপক জি সি দেব, মুনীর চৌধুরী, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, রাশেদুল হাসান, ড. আনোয়ার পাশা, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সার, নিজামউদ্দীন আহমেদ, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, সাহিত্যিক সেলিনা পারভীনসহ অনেককে।
একই সঙ্গে সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি প্রত্যেক শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের স্বজনদের প্রতি, যারা দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে বয়ে চলেছেন আপনজনকে হারানোর বেদনা ও কষ্ট।
স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা করেছিল, একেবারে শেষ দিকে এসে পরাজয়ের আগমুহূর্তে অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর তা রূপ নেয় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তখন তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসদের সহযোগিতায় বেছে বেছে হত্যা করেছিল জাতির অগ্রণী শিক্ষক, লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের।
এসব হত্যার উদ্দেশ্য একেবারে স্পষ্ট, তারা পরাজয় নিশ্চিত জেনে চেয়েছিল স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়া দেশটিকে মেধায়-মননে পঙ্গু করে দেয়া।
রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের ব্রাশফায়ার করে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, অনেককে লাইন ধরিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতি এ বছর এমন একটি প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে যখন একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিচার কাজ এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্বে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় দণ্ডিত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসিরর দণ্ড কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় আপিল বিভাগে বহাল রয়েছে। চূড়ান্ত রায় হয়েছে আরো কয়েকজনের ।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বেশকিছু কর্মসূচি পালন করবে। তার মধ্যে আজ সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ।
সকাল ৮টা ১০ মিনিট মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ৮টা ৪০ মিনিট বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন।
সকাল ৯টা ১০ মিনিট রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। বিকেল ৩টা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
জাতীয় পার্টির কর্মসূচি
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সকাল ৮টায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের গেটের সামনে (মাজার রোডে) দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপির কর্মসূচি
সকাল সাড়ে ৮টায় মিরপর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিকাল ৩টায় ঢাকা মহানগর বিএনপির আয়োজনে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভা।
এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু একাডেমি, উদীচী, ন্যাপ ভাসানী, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।