খুলনা প্রতিনিধি : সুন্দরবনের শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচলের দাবি জানিয়েছে খুলনা অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহণ মালিকরা। সোমবার দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশে ক্ষতির অজুহাতে মংলা-জয়মনি-শ্যালা নৌ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে মংলা বন্দর থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বাঘাবাড়ী, নগরবাড়ী, আশুগঞ্জ, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছেনা।
একই ভাবে দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে মংলা, খুলনা, নওয়াপাড়ায় কোনো পণ্য আসতে পারছে না। কোনো এক অশুভ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মংলা বন্দরকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব দাবি করেন, খুলনাঞ্চল লবণ মিলের একটি এলাকা। এসব মিলের কাঁচামাল চট্টগ্রাম থেকে আনা হয়। বর্তমানে চলছে কাঁচামাল সংগ্রহের মওসুম। কিন্তু জয়মনি-শ্যালা রুট বন্ধ করে দেয়ায় লবণের কাঁচামাল পরিবহণ করতে না পারায় লবণ মিলগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
আরো উল্লেখ করা হয়, নৌরুট বন্ধ থাকায় সিলেট থেকে খুলনাঞ্চলে বালিপাথর আসতে পারছে না। এজন্য খুলনাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজেও বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। ভারত থেকে পণ্য আনা যাচ্ছে না। এসব কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
এছাড়া শ্যালা নদীর মংলার দিকে অগ্রগামী এবং ঢাকা বরিশার রুটে প্রায় শতাধিক নৌযান আটকে আছে। তেলের ট্যাংক আসতে না পারায় জ্বালানি তেলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে, যা স্থায়ীভাবে বড় সঙ্কট সৃষ্টি করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, বর্তমানে মংলা বন্দরে ৮টি সমুদ্রগামী জাহাজ ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন পণ্য নিয়ে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বোরা ধান চাষে ব্যবহারযোগ্য জরুরি ইউরিয়া ৯৫ হাজার ৯৮৭ মেট্রিক টন, টিএসপি সার ৩০ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন, এমওপি ২৩ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার ২০ হাজার মেট্রিক টন।
জয়মনি-শ্যালা নৌরুট বন্ধ থাকার ফলে উল্লেখিত জাহাজগুলো থেকে বাইরের গন্তব্যে পণ্য পরিবহণ করা যাচ্ছে না। এতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এ সঙ্কট চলতে থাকলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সামুদ্রিক বন্দর মংলা বন্দর আবার অচল হয়ে পড়বে। খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব ওয়াহিদুজ্জামান খান পল্টু, গোলাম ফারুক, চিত্তরঞ্জন সাহা, আব্দুল বাতেন, নুরুল ইসলাম খান, অসীম কুমার সোম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে দুর্ঘটনায় ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার ফার্নেস ওয়েলসহ ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেন নামে তেলবাহী ট্যাংকার ডুবে যায়। দুদিন পর ১১ ডিসেম্বর বন্দর কর্তৃপক্ষ, বনবিভাগ, বিপিসির সঙ্গে যৌথ সভা শেষে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান সামছুদোহা খন্দকার শ্যালা নদী দিয়ে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পরে নদীতে ভেসে থাকা তেল স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় উত্তোলন শুরু হয়।