
গত ১৫ জুন গোলাহাট বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজের ফলক উন্মোচন করেন স্থানীয় সংদস সদস্য আলহাজ মো. শওকত চৌধুরী
নীলফামারী প্রতিনিধি : স্বাধীনতার ৪২ বছর পর নীলফামারীর সৈয়দপুর গোলাহাট বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও অর্থাভাবে তা মাঝপথে থেমে গেছে গেছে। ঢাকঢোলা পিটিয়ে দেড় বছর আগে প্রায় এক একর জমির ওপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় করার পরে উদ্যোক্তারা সটকে পড়েছে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ।
নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ আলহাজ মো. শওকত চৌধুরী গত বছরের ১৩ জুন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সৈয়দপুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজকুমার পোদ্দারকে আহ্বায়ক করে নির্মাণ কাজ তদারকি করতে গঠন করা হয় সাত সদস্যের কমিটি। কাজও শুরু হয় জোরেসোরে। ইতোমধ্যে ব্যয় করা হয়েছে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা। স্মৃতিসৌধ নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় এক কোটি টাকা। তবে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে পাওয়া গেছে মাত্র তিন টন গম ও আট হাজার টাকা। সরকারি অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা আজও মেলেনি। অথচ প্রাক্কলিত ব্যয়ের সিংহভাগ টাকার যোগান দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিত্তবানরা।
১৯৭১ সালের ১৩ জুন শহরের ৩৩৮ জন মাড়োয়ারী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিয়ে আসে বিহারীরা। পরে তাদের একটি বিশেষ ট্রেনে তুলে নিয়ে আসা হয় গোলাহাটে। পাক হানাদারদের দোসর বিহারীরা এখানে ট্রেনের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে এক এক করে নারী-পুরুষ-শিশুকে ট্রেন থেকে নামিয়ে তলোয়ার ও বেনয়েট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। তাদের মধ্যে তিন জন প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়।
সেই পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে সংসদ সদস্য আলহাজ মো. শওকত চৌধুরী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। গত বছরের ১৩ জুন তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্মৃতিসৌধের নকশায় মন্দির, পার্ক, পুকুর, রেস্ট হাউস নির্মাণেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়। এজন্য ব্যয় ধরা হয় এক কোটি টাকা।
স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কমিটির আহ্বায়ক ব্যবসায়ী রাজ কুমার পোদ্দার জানান, অর্থাভাবে স্মৃতি সৌধের নির্মাণ কাজ মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন অনুষ্ঠানে হুইপ শওকত চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় মন্ত্রণালয় থেকে তিনি একটি কানাকড়িও আনতে পারেননি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের দেয়া পাঁচ লাখ টাকায় কিছু কাজ করা হয়েছে। এখন টাকা অভাবে কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী জানান, নিজের ভাটার ইট ও নগদ পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে স্মৃতিসৌধের কাজ এগিয়ে নেয়া হয়েছে। আরও আট টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই চাল দিয়ে স্মৃতিসৌধের কাজ ও রেল লাইনের পাশ দিয়ে সড়কের কাজ করা হবে।
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গোলাহাট বধ্যভূমি নির্মাণ কাজ করতে তালিকাভূক্ত করেছে। বরাদ্দ পেলেই বাকী কাজগুলো করা হবে।