ঢাকাসোমবার , ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সেজেছে স্থপতি মাইনুলের স্মৃতিসৌধ

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৪ ২:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

Sriti Sowdaনিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানী থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে সাভার স্মৃতিসৌধ বিজয় ও উল্লাস প্রতীক। আমাদের স্বাধীনতার সেই উল্লাসধ্বনি ছড়িয়ে পড়বে ৫৫ হাজার বর্গমেইল জুড়ে। ৪৩ বছর আগে বিজয় অর্জিত হলেও সেই স্মৃতি গৌরবের সঙ্গে বহন করছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
দেশ বিজয়ী যোদ্ধাদের স্মরণ করবে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায়। সেজন্য সাজ সাজ রব আজ জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ঘিরে। বিজয়ের মাসের শুরু থেকেই ব্যাপক কর্মযজ্ঞ আর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা শেষে স্মৃতিসৌধ সেজেছে ভিন্নরূপে। স্মৃতিসৌধের ভেতরে থাকা বিভিন্ন শতাধিক লাইট সচল করা হয়েছে।
এছাড়াও রয়েছে একাধিক বিমার প্রজেক্টর টু টি, বিমার প্রজেক্টর থ্রি, ওয়াল ওয়াস বোলার্ড লাইট ও মেটাল হেলাইড। এ সব লাইট স্থাপনের ফলে রাতের স্মৃতিসৌধকে দেবে নতুন প্রাণ। ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের রাতের স্মৃতিসৌধ সহজেই চোখে পড়ছে। এমনকি বিমানের যাত্রীরা-ও সেই আলোকিত স্মৃতিসৌধকে দেখতে পাবেন অপরূপা বেশে।
এদিকে, স্মৃতিসৌধের বাইরে গোটা সাভার পরিণত হয়েছে তোরণের নগরীরতে। বিজয় দিবসের সাফল্য কামনা করে আমিনবাজার থেকে নবীনগর পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দলীয় ও ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে শতাধিক তোরণ।
সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের তত্ত্বাবধায়নে থাকা সহকারী প্রকৌশলী সতিনাথ বাসক বলেন, ‘অন্যান্যবারের তুলনায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে এবার স্মৃতিসৌধকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে। সপ্তাহ জুড়ের দর্শনার্থীদের ভিড়ের মাঝেই শেষ হয়েছে ধোয়ামোছা, সাফসুতর ও রংতুলির কাজ। স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন ধাপে রংতুলির আঁচড়ের আলপনায় অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে স্মৃতিসৌধ। সেই সৌন্দর্যকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলতে নানা জাতের ফুলের সৌরভ ছড়ানো শোভাযাত্রা যেন জয়গান করছে বিজয়ের। পালা করে দেড় শতাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিনরাত একযোগে সবকাজ করে শেষ করেছেন।
তবে বিজয়ের এই দিন আর দেখবেন না স্থপতি মাইনুল ইসলাম। সৌধের নকশায় জ্বলজ্বল করবে তার স্মৃতি। লক্ষ শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৭৮ সালে সরকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। সে সময়ের ২৬ বছরের তরুণ স্থপতি মাইনুল ইসলামের নকশায় নির্মিত হয় এ স্মৃতিসৌধ। যদিও প্রতিযোগীর ৫৭টি নকশা জমা পড়েছিল।
গত ১০ নভেম্বর জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থপতি মাইনুল হোসেন ইন্তেকাল করেন। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত হলেও এতদিন ছিলেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। চাপা কষ্ট বুক জুড়ে। তার এ কষ্টের গল্প একটি দৈনিক পত্রিকায় (প্রথম আলো) ছাপা হয়েছিল ২০০৬ সালের মার্চে।
১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ যখন জাতীয় স্মৃতিসৌধ উদ্বোধন করেন, তখন সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণও পাননি স্থপতি মাইনুল হোসেন। রাষ্ট্রীয় ভিআইপিরা চলে যাওয়ার পর তিনি সেখানে গিয়ে জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন তার স্বপ্নের নির্মাণকে।
স্থপতি মাইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালের ৫ মে মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ির দামপাড়া গ্রামে। তার বাবা মুজিবুল হক ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ইতিহাসের শিক্ষক ছিলেন। এক সাক্ষাতকারে তিনি সৌধের নকশার ব্যাখ্যা করে স্তম্ভটির আকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চারদিকে প্রচণ্ড চাপ। সেই চাপে কিছু একটা উঠে যাচ্ছে। সাতটা খাঁজের মানে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত সাতটা বড় আন্দোলন হয়েছিল। সবচেয়ে নিচের খাঁজটা বায়ান্ন, সবচেয়ে উঁচুটা একাত্তর…।’
সেই সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছিলেন, স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর কারা যেন বেনামি চিঠি দিয়ে তাকে খুন করতে চেয়েছিল। তারপর পত্রিকায় ইচ্ছা করে তার নাম ভুল লেখা হয়েছিল। নকশার সম্মানী বাবদ ২ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল, তার আয়কর ধরা হয়েছিল ৫০ শতাংশ, মানে ১ লাখ। পরে রাজস্ব বোর্ডের কমিশনারকে ধরে ২০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছিলেন।
এদিকে, সেনাবাহিনীর নয় পদাতিক ডিভিশনের সার্বিক তত্বাবধায়নে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোমবার থেকে স্মৃতিসৌধের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ)। নিরাপত্তার কারণে  তিনদিনের জন্যে স্মৃতিসৌধের অভ্যন্তরে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকারের ওপর আরোপ করা হয়েছে বিধি-নিষেধ। স্মৃতিসৌধের আশে পাশে বিভিন্ন গেয়েন্দা সংস্থার নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশারাফুল আজিম বলেন, ‘নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক শতাধিক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার নিয়েজিত থাকবে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা পুষ্পার্ঘ অর্পণের পর পরই সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে খুলে দেয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ চত্বর।
এর বাইরে যানজট এড়াতে ও পুলিশের ট্রাফিক ডিভিশনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। বিজয়ের উচ্ছাসে লাখো মানুষের ঢল নামবে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয় দিবসকে ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।