ঢাকাবুধবার , ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. কৃষি ও অন্যান্য
  5. খেলাধুলা
  6. গল্প ও কবিতা
  7. জাতীয়
  8. তথ্যপ্রযুক্তি
  9. দেশজুড়ে
  10. ধর্ম ও জীবন
  11. প্রবাস
  12. বানিজ্য
  13. বিনোদন
  14. বিশেষ প্রতিবেদন
  15. মুক্তমত
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরই ভরসা

দৈনিক পাঞ্জেরী
ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪ ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

Muktijudha-jadughar-2নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সাক্ষী বাংলার রক্তভেজা মাটি/ সাক্ষী আকাশের চন্দ্রতারা/ ভুলি নাই শহীদের কোন স্মৃতি/ ভুলি নাই কিছুই আমরা।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখে পড়বে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের সাক্ষী ও চেতনার প্রতীক ‘শিখা চির অম্লান’। তার উপরে লেখা ওই কয়েকটি কবিতার লাইন। কবিতার পঙক্তিগুলো আমাদের জানান দেয় শহীদের আত্মদানের কথা।
বাংলাদেশের গৌরবময় এক ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয়মাস মক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন দেশের অভ্যুদয় ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের অনুপ্রেরণা। আর সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য চিত্র, আলোকচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের শহীদের ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম এবং ইতিহাসের নানা স্মারকের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
১৯৯৬ সালের ২২ মার্চ ঢাকার সেগুনবাগিচায় আটজন ট্রাস্টির অনুদানে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা হয়। লক্ষ্য ছিল আগামী প্রজন্মকে ৭১’এর সঠিক ইতিহাস জানানো।
দোতলা বিশিষ্ট ভবনের ৬টি গ্যালারি বা কক্ষ দিয়ে সাজানো পলাশীর যুদ্ধের ইতিহাস থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। প্রথম গ্যালারি সাজানো হয়েছে ১৭৫৭ সালে কিভাবে বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য ডুবে যাওয়ার দৃশ্য এবং দু’শ বছরের পরাধীনতার ইতিহাস। ১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার সংগ্রামের নায়কদের চিত্র।
দুই নম্বর গ্যালারির দিকে গেলে দেখা যায় ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক চিত্র। গণতন্ত্র ও অধিকারের দাবিতে বাঙালির সংগ্রাম। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবি ও যুক্তফ্রন্টের বিজয় থেকে ১৯৬৯ সালের পাকিস্তানের নানা বৈষম্য ও শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নানা সময়ের চিত্র।
তৃতীয় গ্যালারি শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ৭ মার্চে ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে যার মাধ্যমে পরবর্তীতে বাঙালিরা ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে থেকে শেখ মজিবুরের পক্ষ থেকে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার চিত্র। এছাড়া এখানে রয়েছে বিভিন্ন দৈনিকের পেপার কাটিং, ছবি, তথ্যদির মাধ্যমে লাখো শরণার্থীর দুর্গতির চিত্র।
দোতলার চার নম্বর গ্যালারিতে গেলে চোখে পড়ে নারী নির্যাতনের চিত্র। এছাড়াও দেখতে পাই সেক্টর কমান্ডার যুদ্ধ পরিচালনার খণ্ডচিত্র, কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের পাকবাহিনীর নির্যাতনের চিত্র ও শহীদ কবি মেহেরুন্নেসার কবিতা সম্বলিত ছবি।
পাঁচ নম্বর গ্যালারিতে ঢোকার মুখে চোখে পড়ে ১৯৭১ সালের ঢাকা খিলগাঁও রেলগেটের পাশে একটি ডোবায় পড়ে থাকা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বাকী ও সহযোদ্ধা বাদলের লাশের চিত্র। এই গ্যালারিটা মুক্তিযুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। এছাড়া গেরিলা যুদ্ধ, নৌবাহিনী, নারী সমাজ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্রের প্রতিচ্ছবি।
ষষ্ঠ গ্যালারিটি হচ্ছে জাদুঘরের শেষ কক্ষ। মুক্তিযুদ্ধের চিত্র প্রদর্শনীতে এ গ্যালারিটা সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও ত্যাগের। আমরা যেসব মা-বোনকে হারিয়েছি তাদের বেদনাদায়ক নির্যাতনের ছবি এখানে সাজানো আছে। আছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের ছবিও।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এ পর্যন্ত ৪৩ বছরে মোট সংগ্রহ করেছে ১৭ হাজার ৫০০টি স্মারক। এর মধ্যে প্রকাশিত স্মারক সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন সিনেমা ও প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয় এখানে।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের জন্য প্রতিদিন ভিড় করে অসংখ্য শিক্ষক-শিক্ষার্থী। রোববার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত।
মলিন হয়ে যাচ্ছে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের কাছে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ঐতিহাসিক অবদান বাঙালি জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিসীম বলে ঘুরতে আসা অনেকেই জানান।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘আমার এখানে আসার কারণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে ঐতিহ্য তার চেতনাকে নিজের মধ্যে ধারণ করা। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধে প্রকৃত ইতিহাস সর্ম্পকে ধারণা পাওয়ার জন্য আমি এখানে এসেছি।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিসর আরও বড় হওয়া উচিৎ মনে করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট অনেক বড় পরিসরের। এতো অল্প জায়গা এতো বড় প্রেক্ষাপটকে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তাই খোলা মেলা পরিসরে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা দরকার।’
জাদুঘরে বেড়াতে আসা উদয়ন স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী নিশাত জাহান বলে, ‘আমি এখানে এসেছি মুক্তিযুদ্ধের চিত্র দেখতে। কীভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, বই পড়ে  সব জানা যায় না তাই এখানে আসা।’
জাদুঘর সূত্রে জানা গেছে, জাদুঘর ফিরে যাচ্ছে নিজস্ব ঠিকানায়। যাচ্ছে আরো বড় ও ব্যাপক পরিসরে। রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরে ( রোড ৪/এ, ব্লুক এফ, প্লট-এফ ১১/এ) প্রায় এক একর (২.৫ বিঘা) জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নিজস্ব ভবন। আশা করা হচ্ছে, নির্মাণকাজ শেষ হলে আগামী বছর জুলাইয়ে উদ্বোধন করা হবে স্থায়ী মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি লেখক গবেষক মফিদুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এই সংগ্রহশালায় যা আছে, সংগৃহীত দশভাগের এক ভাগও এখনো প্রদর্শন করা হয়নি।’
এছাড়া তিনি বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অর্থবহ হয়ে উঠবে। কেবল পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে নয়, পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পাঠের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।’
এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পযর্ন্ত প্রদর্শনী, নৃত্যানুষ্ঠান, দেশাত্মবোধক গানের অনুষ্ঠান, নাটকসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।