আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দীর্ঘ অর্ধ শতাব্দী পর কিউবার সঙ্গে ফের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার এ ঐতিহাসিক ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ল্যাটিন আমেরিকা এবং ইউরোপের নেতারা। তবে তার এ ঘোষণায় নাখোস হয়েছেন অনেক মার্কিন নাগরিক।
কিউবা সরকার বুধবার এক মার্কিন ত্রাণ কর্মীকে মুক্তি দেয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর হাভানায় দূতাবাস খোলার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর আগে মঙ্গলবার মার্কিন ত্রাণ কর্মী অ্যালান গ্রোসের মুক্তি নিয়ে মঙ্গলবার কিউবার প্রেসিডেন্ট রাহুল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে আলাপ করেন ওবামা। এসময় দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে সম্মত হন। ক্যাস্ট্রো তার দেশের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ারও অনুরোধ জানান।
ওবামার এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো বলেছেন,‘তার এই সাহসী এবং ঐতিহাসিক তৎপরতাকে আমাদের স্বীকৃতি জানাতে হবে। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি নিলেন।’
আদর্শগত কারণে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র কিউবার সঙ্গে ১৯৬১ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তখন কমুনিস্ট নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর দেশের বিরুদ্ধে তারা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিল।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেনফ এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিনা ফার্নেন্দেজ কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সামাজিক ন্যায়বিচারের পক্ষে এটি তাদের বদান্যতা।
এদিকে এ ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছে ইউরেপীয় ইউনিয়ন সংক্ষেপে ইইউ। ইইউ’র পররাষ্ট্র প্রধান ফেডেরিকা মোঘেরিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ আর একটি প্রাচীর ধসে পড়তে শুরু করেছে। আমরা আশা করছি কিউবার সমাজের প্রতিটি স্তরে এই সম্পর্কের সুবাতস ছড়িয়ে পড়বে।’
একে ‘মহান পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসে মানুয়েল গার্সিয়া মারগাল্লো। এছাড়া তিনি কিউবার প্রতি সে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করারও দাবি জানিয়েছেন।
হাভানা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক উন্নয়নের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিসও। সাবেক এই শত্রুভাবাপন্ন দেশ দুটি নিজেদের মতপার্থ্যক্য দূর করার কাজে এগিয়ে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।
প্রেসিডেন্ট ওবামার এই ঘোষণার পর কিউবার রাজধানী হাভানাতেও ছড়িয়ে পড়েছে খুশির বন্যা। যুক্তরাষ্ট্রে বন্দী তিন কিউবান নাগরিকের মুক্তি এবং দেশটির ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার খবরে শহরের লোকজন দলে দলে রাস্তায় বেরিয়ে এসে আনন্দ উদযাপন করতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
আর্নেস্তো পেরেজ নামের ৫২ বছরের এক রেস্তোরা কর্মী সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন,‘এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আশা করছি এবার আমাদের জীবনযাত্রা বদলে যাবে।’
তবে প্রেসিডেন্ট ওবামার এ ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কিউবান বংশোদ্ভূত তরুণ আমেরিকানরা একে স্বাগত জানালেও অপেক্ষাকৃত বয়স্করা ওবামার মুণ্ডুপাত করতে শুরু করেছেন। মিয়ামি শহরের মিগুয়াল সাবদ্রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন,‘ওবামার এ ঘোষণায় আমি হতাশ হয়েছি। এই মুহূর্তে ওবামা কাপুরুষের মত আচরণ করেছে। কিউবা সরকারের সঙ্গে বাণিজ্য করার জন্যই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
বিরোধী দল রিপাবলিকান দলের নেতারাও ওবামার এ পদক্ষেপের সমালোচনা করতে শুরু করেছেন। ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেছেন,‘হোয়াইট হাউস সব কিছু তুলে নিতে শুরু করেছে। তবে বিনিময়ে আমরা তেমন কিছুই পাচ্ছি না। কিউবার কাছ থেকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি আদায় না করেই এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমনকি গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করার জন্য একাধিক রাজনৈতিক দল গঠন করারও কোনো প্রতিশ্রুতি দেযনি কিউবা সরকার।’