হাসান রেজা : পটুয়াখালীর দশমিনায় বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পে বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরীক্ষণে সহায়তা প্রদানকারী প্রকল্পের সমাপনী ওয়ার্কশপ আজ ১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)’র চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল ইসলাম সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. এসএম নাজমুল ইসলাম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও বীজ উইংয়ের মহাপরিচালক আনোয়ার ফারুক বিশেষ অতিথি এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)’র উপ প্রতিনিধি ডেভিড ডাব্লিউ ডুলন সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি সচিব দেশের দক্ষিণ ও উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকা-ে আধুনিক ও উন্নতমানের কলাকৌশল প্রয়োগের উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিকুলতা সহিষ্ণু আরো নতুন জাত উদ্ভাবনে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার বিশাল যজ্ঞে দশমিনা বীজ বর্ধন খামার উন্নত জাতের মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ‘দশমিনা বীজ বর্ধন খামারে বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও পরীক্ষণে সহায়তা প্রদান’ শীর্ষক প্রকল্পটির অর্থায়ন করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। দশমিনা বীজ বর্ধন খামারে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও পরীক্ষণে কারিগরি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নতমানের ভিত্তি বীজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এফএও সহায়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ২ লাখ ৬৪ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয়ে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে শুরু হয়ে চলতি ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে সহায়ক এই প্রকল্পের সকল কার্যক্রম ইতোমধ্যে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানানো হয় ওয়ার্কশপে। উন্নতজাতের বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণন সুগমকরণ এবং এর মাধ্যমে উপকূলীয় ও চরাঞ্চলবাসীর জীবনমান পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। বীজ বর্ধন খামারে এই প্রকল্পের কারিগরি সহায়তার ফলে বীজ উৎপাদনের পূর্ব ও পরবর্তী পর্যায়ে গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ ও শক্তিশালীকরণ, উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য উপযোগী বীজ সহজলভ্যকরণসহ এ অঞ্চলের কৃষক, জনগণ ও উপকারভোগীদের বীজ ফসলের উৎপাদন সংক্রান্ত কারিগরি বিষয় সম্পর্কে অবহিত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানানো হয় ওয়ার্কশপে।

দশমিনা বীজ বর্ধন খামারে আমন ধান ক্ষেতের দৃশ্য ফাইল ছবি
ওয়ার্কশপে আরো জানানো হয়, দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলের ১১টি স্থানীয় আমন ধানের জাত বিশুদ্ধকরণ কার্যক্রমে এফএও’র এ সহায়ক প্রকল্প অর্থায়ন করে। এছাড়া, ধান, গম, ভুট্টা, চীনা, কাউন, সরিষা, সুর্যমুখী, তিল, মুগ, মসুর, খেসারীর মান সম্পন্ন বীজ উৎপাদনে কারিগরী সহায়তা প্রদান করেছে। সেইসাথে দশমিনা বীজ বর্ধন খামারের মাটি পরীক্ষা ও ডিজিটাল ম্যাপ তৈরীসহ বীজ পরীক্ষণ গবেষণাগার স্থাপনে কারিগরী ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। প্রতিকুলতা সহিষ্ণু ধান, ডাল ও তৈল বীজ ফসলের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি এবং ইদূর জাতীয় বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য লিফলেট তৈরিতেও সহায়তা পাওয়া গেছে।
দশমিনা বীজ বর্ধন খামার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতিকুলতা সহিষ্ণু জাতের বীজ উৎপাদনে কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিএডিসি’র কর্মকর্তা, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছে এফএও’র এই সহায়ক প্রকল্পটি। মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে বীজ উৎপাদন গাইডলাইন, বীজ শুকানোর কৌশল সংক্রান্ত গাইডলাইন, বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ প্রযুক্তি বিষয়ে ট্রেনিং ম্যানুয়াল তৈরি ও সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ ছাড়া, বীজ বিপণন ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের জন্য বীজের চাহিদা নিরুপণ, প্রতিকুলতা সহিষ্ণু জাত বিষয়ে কৃষকদের অবগত করা এবং সঠিক সময়ে মানসম্পন্ন বীজ সরবরাহের জন্য মার্কেট সার্ভেও সম্পন্ন হয়েছে এফএও’র এই সহায়ক প্রকল্পের মাধ্যমে।