নিউজ ডেস্ক :
পাটের জীন নকশা আবিষ্কারক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আর নেই।
শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)।
ড. মাকসুদুল আলম লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াইয়ে কুইনস মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই হাসপাতালেই শনিবার শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর।
মৃত্যুর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানোয়ায় ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াইয়ে শিক্ষক ছিলেন।
মাকসুদুল আলমের অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশের জন্য এবং বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণা বিশেষ করে শস্য বিচিত্রকরণের ক্ষেত্রে এক বিরাট ক্ষতি। তার মৃত্যু জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
মাকসুদুল আলম ১৯৫৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা দলিলউদ্দিন আহমেদ ছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) একজন কর্মকর্তা এবং মা লিরিয়ান আহমেদ ছিলেন একজন সমাজকর্মী ও শিক্ষিকা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার পিতা শহীদ হলে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে মা লিরিয়ান আহমেদের ওপর। শিক্ষকতা করে তিনি তাঁর চার ছেলে ও চার মেয়েকে গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পর মাকসুদ চলে যান রাশিয়ায়। সেখানে মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে অণুপ্রাণবিজ্ঞানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পরে জার্মানিতে বিখ্যাত ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৮৭ সালে প্রাণরসায়নে পুনরায় পিএইচডি করেন। মস্কোতে মাকসুদ ভ্লাদিমির পেত্রোভিচ মুলাচেভের সংস্পর্শে আসেন।
ড. মাকসুদুল আলমের প্রাণরসায়নের নানা শাখায় অবদান রয়েছে। জার্মানিতে তিনি কাজ করার সুযোগ পান প্রাণরসায়নের অন্য দুই দিকপাল ‘ডিয়েটার ওয়স্টারহেল্ট’ ও ‘জেরাল্ড হেজেলবাউয়ের’ সঙ্গে। জার্মানির পর তিনি হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন বাই প্রডাক্ট ইঞ্জিনিয়ারিং সেন্টারে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। ওইসময় যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গবেষণার জন্য মাকসুদ ও তাঁর সহকর্মীদের ১০ লাখ ডলার অনুদান দেয়। ওই সেন্টারে কাজ করার সময় ২০০০ সালে তিনি ও তাঁর সহকর্মী ‘রেন্ডি লারসেন’ প্রাচীন জীবাণুতে মায়োগ্লোবিনের মতো এক নতুন ধরনের প্রোটিন আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের সুবাদে মাকসুদের খ্যাতি ও দক্ষতা সবার নজরে আসে।
হাওয়াইয়ান পেঁপের জিন নকশা উন্মোচনের জন্য ডাক পড়ে তাঁর। এ কাজ সম্পন্ন করার পর বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের প্রচ্ছদে স্থান পান তিনি। পেঁপের জিন নকশা উন্মোচনের পর তিনি পাটের জিন নকশা উন্মোচনের কথা ভেবেছিলেন। ওইসময় কয়েকবার বাংলাদেশেও এসেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ডাক পড়ে মালয়েশিয়ায় রাবারের জিন নকশা উন্মোচনের জন্য। ওই কাজেও তিনি সফল হন। পরে তিনি মনোনিবেশ করেন পাটের জিন নকশা উন্মোচনে।