অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ঢাকাস্থ দক্ষিণ কোরিয়া দূতাবাস এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে ‘কোরিয়ার উন্নয়ন অভিজ্ঞতা : বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা’ শীর্ষক এক সংলাপে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এ কথা বলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। কারণ দুটি দেশই যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় যাত্রা শুরু করে। তৎকালীন ব্রিটিশ জেনারেল ম্যাক আর্থার ভবিষ্যতবাণী করে করেছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে উঠতে একশ বছর সময় লাগবে। কিন্তু তারা মাত্র ৫০ বছরে যুদ্ধাবস্থা কাটিয়ে উঠেছে। এজন্য দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে তাদের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে পারি।’
দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহারণ তুলে ধরে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘কোরিয়া বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা মাত্র ৫০ বছরে তাদের জাতীয় আয় ৪০০ গুণ এবং জিডিপি ৭০০ গুণ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের মাথাপিছু আয় ২০ হাজার ডলার এবং বর্তমান জিডিপি ৮শ বিলিয়ন ডলার।’
তোফায়েল বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার উন্নয়নে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে স্থিতিশীল সরকার। স্বাধীনতার পর প্রায় ৯ কোটি মানুষ নিয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হলেও রাজনৈতিক ভুলের কারণে তা সঠিকভাবে এগোয়নি। তবে ১৯৯১ সালে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হওয়ার মাধ্যমে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে আমাদের জিডিপিতে কৃষির অবদান ছিল ৭৮ শতাংশ। কৃষিনির্ভর অর্থনীতি হওয়ায় আমাদের জমির উপর নজর দিতে হয়েছিল। তাই সে সময় শিল্পায়ন সম্ভব হয়নি। এখন জিডিপিতে কৃষির অবদান মাত্র ১৭ শতাংশ। দেশে এখন জনসংখ্যা বাড়ছে। বসবাসের জন্য কৃষি জমি কমছে এ কারণে আমাদের শিল্প কারখানার ওপর নজর দিতে হচ্ছে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সর্ম্পক বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়তই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে ৩৪৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার।’
তিনি বলেন, ‘স্বল্প উন্নত দেশ হিসেবে জিএসপি’র আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও রুলস অব অরিজিনের (আরওও) কঠোরতার কারণে এর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আশা করছি দক্ষিণ কোরিয়া সরকার আরওও-এর শর্ত শিথিল করবে।’
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি উন-ইয়ং, সিডিপি’র অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম হোসেন, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদসহ প্রমুখ।