আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাক ও সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তারকারী জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামি স্টেটের হাতে বন্দী বহু ইয়াজেদি নারী আত্মহত্যা করছে। ধর্ষণসহ নানা যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে তারা এ পথ বেঁছে নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে ইরাকের উত্তরাঞ্চলে হামলা চালিয়ে ইয়াজেদি গোত্রের শত শত নারী ও শিশুকে বন্দি করে আইএস। এসব নারীদের ওপর তারা বলপূর্বক বিবাহ, পাচার, ধর্ষণসহ নানা যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে।
তাদের হাত থেকে পালিয়ে আসা মেয়েরা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের কাছে তাদের নির্যাতনের বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরেছেন। এদের একজন হচ্ছেন লুনা। ২০ বছরের এই মেয়েটি জানিয়েছেন, ইরাকের মসুল শহর দখল করার পর বিভিন্ন বয়সী ২০ নারীর সঙ্গে তাকেও বন্দী করেছিল আইএস । এদের কয়েকজনের বয়স ছিল দশের নিচে। তিনি বলেন,‘একদিন আমাদের নাচের পোশাক দেয়া হয়। এসব পোশাক পরে তারা আমাদের গোসল করতে বলে। তখন বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে জিলান নামের এক কিশোরী।সম্ভবত তাকে যে এক লোকের কাছে যৌনকর্মী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে, এটি সে জানতে পেরেছিল।’
ওয়াফা নামের অন্য এক নারী জানান, জঙ্গিরা তাদের জোর করে বিয়ে করতে চাইলে সে এবং তার বোন আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল।
অ্যামনেস্টিকে ওয়াফা জানিয়েছে,‘গলায় রুমাল বেধে আমরা একসঙ্গে ঝুঁলে পড়েছিলাম। একসময় আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এ ঘটনায় বেশ কয়েকদিন আমি কথা বলতে পারিনি।’
আইএসের এসব যৌন নির্যাতন সম্পর্কে অ্যামনেস্টির উপদেষ্টা ডোনাত্তেলা রোভেরা আরো জানিয়েছেন, যৌনদাসী হিসেবে যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের অনেকেই শিশু এবং তাদের বয়স ১৪, ১৫ বা তারচেয়েও কম। কেবল যোদ্ধারাই নয় বরং তাদের অনেক সহযোগীও এসব মেয়েদেরকে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে।
আইএসেরর হাত থেকে পালিয়ে আসা ৪০ জনের বেশি নারীর সঙ্গে কথা বলার পর অ্যামনেস্টি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে, যুদ্ধ কৌশল হিসেবেই নারীদের প্রতি এধরণের যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে জঙ্গিরা। রোভেরা এসব নির্যাতনকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন। তিনি কুর্দিস্থানের আঞ্চলিক সরকার, জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এসব নারী নির্যাতনের বিরদ্ধে সক্রিয় হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে আরেক খবরে বলা হয়েছে, মানবাধিকার কর্মীদের ধারণা করেন, প্রায় ৩,৫০০ , ইয়াজেদি নারী ও শিশুকে আটক বা যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আরো ২ হাজার ইয়াজেদি পুরুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।