সিলেট প্রতিনিধি
কোনো অবস্থায়ই অন্তঃকোন্দল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না সিলেট বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বানেও তাদের সাড়া নেই। সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতাদের সিলেট সফরে অতীতের সকল ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বানকে আগ্রাহ্য করে গতকাল বৃহস্পতিবারও পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। স্থানীয় এক নেতার অভিযোগ, ‘এ কোন্দলের কারণে হাসি-ঠাট্টার পাত্রে পরিণত হয়েছে সিলেট বিএনপি।’
বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকে চূড়ান্ত আন্দোলনেও সিলেট বিএনপির কার্যকরী কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। কোন্দলে জর্জরিত বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেবল ফটোসেশন করে রাজপথ ছাড়তেন। ফলে বিগত দিনে খালেদা জিয়ার ডাকা সরকার বিরোধী কোনো আন্দোলনই সফলতার মুখ দেখেনি।
গত শনিবার বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদের সঙ্গে বৈঠককালে সিলেট বিএনপির নেতারা কোন্দলের বিষয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। জবাবে অতীতের সকল বিভেদ ও ভ্রান্তি ভুলে গিয়ে আগামীতে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাগিদ দেন সালাউদ্দিন। এ ছাড়া শিগগিরই সিলেট বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নতুন কমিটি গঠনেরও আশ্বাস দেন এই কেন্দ্রীয় নেতা।
কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান সালাউদ্দিন আহমেদের এমন আশ্বাসের পাঁচদিন পর আবার পুরোনো রূপ ধারণ ও লালন করতে শুরু করেন সিলেট বিএনপির নেতারা। কেন্দ্রের কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করেন তারা।
জানা যায়, ঢাকার বকশীবাজারে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে জেলা শহরগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। কেন্দ্র ঘোষিত ওই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট জেলা-মহানগর বিএনপি দুভাগে বিভক্ত হয়ে মিছিল সমাবেশ করে। প্রথমে মহানগর বিএনপির একাংশ মিছিল করে। পরে অপর একটি অংশ মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের ব্যানার ব্যবহার করে মিছিল সমাবেশ করে।
এ অবস্থা সিলেট জেলা বিএনপিরও। তারাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে মিছিল সমাবেশ করেছে। জেলা বিএনপির একাংশ প্রথমে নিজেদের ব্যানারে মিছিল সমাবেশ করলে অপর অংশ ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে মিছিল সমাবেশ করে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় প্রথমে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে মহানগর বিএনপির একাংশ।
সমাবেশ পরিচালনা করেন- মহানগর বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক আজমল বকত সাদেক। বক্তব্য দেন মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী, মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি তারেক আহমদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী, নজিবুর রহমান নজিব, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম সিদ্দিকি খালেদ, যুগ্ম সম্পাদক সাঈদ আহমদ প্রমুখ।
এরপর মুক্তিযোদ্ধা দল সিলেট মহানগর শাখা কোর্ট পয়েন্ট থেকে একটি মিছিল নিয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমদ খসরু।
এরপর জেলা বিএনপির ব্যানারে কোর্ট পয়েন্ট থেকে আরেকটি বিক্ষোভ মিছিল শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। ওই সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক দিলদার হোসেন সেলিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক প্রমুখ।
পরে কোর্ট পয়েন্ট থেকে ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ, মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ব্যানারে আরেকটি মিছিল বের হয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফফার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, মহানগর বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম, কাউন্সিলর দিনার খান হাসু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল প্রমুখ।
বিএনপির এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থার কারণে প্রত্যেক মিছিলে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অনেক কম ছিল। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, এভাবে কর্মসূচি পালন করলে সরকার বিরোধী আন্দোলন কোনোভাবেই সফল করা যাবে না।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার মোবাইলে ফোন করলে কেউ রিসিভ করেননি। আবার কারও মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২নং ওয়ার্ড বিএনপির এক সিনিয়র নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিলেট বিএনপি এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তারা আন্দোলনে নেই। আর কেন্দ্র থেকে বিএনপির কর্মসূচি দেয়া হয় ঠিক। কিন্তু সেই কর্মসূচি পালন করা হয় নামকাওয়াস্তে।
আগামী দিনে বিএনপির আন্দোলন সফলে হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিসের আন্দোলন? গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিরা সিলেটে এসে বলে গেলেন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমরা সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে কথা বললে সবাই আমাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে।