নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শাহজাহানপুরের পাইপ থেকে শিশু জিহাদকে মৃত উদ্ধারে নিজের এবং দায়িত্বশীলদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার না করে উল্টো সাফাই গাইলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেন, ‘তাদের ব্যর্থ বলা যাবে না, তারা তো শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। শেষে আল্লাহ সদয় হয়েছিল ছেলেটির উপর।’
রোববার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ও প্রতিকার জাতীয় কমিটির’ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
স্থানীয় কয়েক যুবকের প্রচেষ্টায় জিহাদকে উদ্ধারের বিষয়টি বেমালুম ভুলে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘সবচেষ্টা ব্যার্থ হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃপক্ষকে ক্যাচার নামানোর জন্য আমরাই বলেছিলাম। তারা শনিবার সকাল ১০টা থেকে ক্যাচার নামিয়ে ২-৩ বার ব্যর্থ হয়ে শেষবারে সফল হয়েছে। তখন পর্যন্ত সেখানে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। ক্যাচার নামিয়েও যখন সফলতা আসছিল না তখন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন- হয়তো আর পাওয়া যাবে না। তবে শেষমেশ আল্লাহ সহায় হয়েছিলেন ছেলেটির উপর।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে শাজাহানপুর এলাকায় বাসার পাশে খেলতে গিয়ে পানির পাম্পের ছয়শ’ ফিট গভীর পাইপের খোলা মুখ দিয়ে নিচে পড়ে যায় জিহাদ নামের তিন বছরের একটি শিশু। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় ২৩ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে জানান পাইপের ভিতরে জিহাদের কোনো অবস্থান তারা পায়নি। সবশেষ তারা অভিযান স্থগিত ঘোষণা করেন। এর মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মাথায় স্থানীয় কয়েক যুবকের প্রচেষ্টায় উদ্ধার হয় শিশু জিহাদের মৃতদেহ।
উদ্ধার অভিযানে ফায়ার সার্ভিস ব্যর্থ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা কয়েক ঘণ্টা কাজ করার পর উপলব্ধি করলো তাদের এমন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের অতীত অভিজ্ঞতা নেই। এ ধরনের ঘটনাও বাংলাদেশে এর আগে ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস তখন সবার কাছে সহায়তা চেয়েছে। ওয়াসা, সেনাবাহিনী, বুয়েট, পুলিশ, জনগণের কাছে সাহায্য চেয়েছে। যাদের অভিজ্ঞতা ছিল সবাই এগিয়ে এসেছেন। সেখানে বিভিন্ন সংস্থার যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন তাদের ‘জ্ঞান’ কাজে লাগিয়ে অভিযান চালানো হয়েছিল।’
‘দুইশ ফুট নিচে ক্যামেরা নামিয়ে কিছুই দেখলাম না। দেখলাম শুধু একটি সাদা সাবস্ট্যান্স, আর কিছু দড়ি-টড়ি। আর দেখলাম কয়েকটা টিকটিকি’ যোগ করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পাইপের ভেতরে জিহাদের জুস খাওয়া ও চিৎকার করার যে কথা সরকারি উদ্ধারকারীরা জানিয়েছিল তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হয়তো অনুমানের ভিত্তিতে বলেছিলেন। এতো উপর থেকে পড়ে গিয়ে তার বাঁচার কথা নয়।’
জিহাদের বাবাকে আটকে রাখা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমারা এখানে পাচ্ছি না তাহলে ছেলেটি গেছে কোথায়। ছেলেটি হারিয়েও যেতে পারে; হারিয়ে গেলে তাকে খুঁজে বের করতে হবে- এমন একটি ধারণা থেকে হয়তো ছেলেটির বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। এখানে অন্য কোনো ইনটেনশন ছিল না। ছেলেটিকে খুঁজে বের করাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল।’
বৈঠকে উপস্থিত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার এ বিষয়ে বলেন, ‘বাচ্চাটা গেল কোথায় এটা জানার জন্যই তার বাবাকে আন্তরিকভাবে থানায় নেয়া হয়েছিল। কেউ মর্মাহত হয়ে থাকলে তা অবশ্যই দেখবো।’
জিহাদের বাবার সঙ্গে অসাদাচারণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যার মধ্যে নূন্যতম মনুষত্ব্যবোধ থাকবে তার পক্ষে বাচ্চাটার বাবার সঙ্গে অসাদাচারণ করার কথা নয়।’