নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রম আদালতের রায় উপেক্ষা করে ২৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বকেয়া বেতন আটকে রেখেছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। এদের কাছে ‘বিশেষ সুবিধ’ না পাওয়ায় বকেয়া বেতন তোলার অনুমোদন দিচ্ছে না বলে ব্যাংকটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম ফরিদ উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে শ্রম আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালনা পর্ষদ বিভিন্ন অঞ্চল ও শাখার ৩৬ জন অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিতে স্থায়ী করে। একই সঙ্গে সেই মোতাবেক তাদের বকেয়া বেতন ভাতা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ২০১৩ সালে ১৩ জন তাদের পাওনা বেতন ভাতাদি পেয়েছে। কিন্তু কিন্তু প্রায় ৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই ২৩ জন এখনো পাওনা টাকা বুঝে পাননি।
এমডিকে ‘বিশেষ সুবিধা’ না দেয়ায় বাকিরা এখনো টাকা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। তার একক কর্তৃত্বের কারণে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলারও সাহস পাচ্ছে না। সম্প্রতি পর্ষদ সভায় স্থায়ীকৃতদের পাওনা টাকা পরিশোধের তাগিদ দেয়া হলে এমডি এড়িয়ে যান বলেও জানা গেছে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীদের কয়েকজন বলেন, প্রশাসন শাখার ডিজিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন কর্মককর্তা এমডির কাছের লোক হওয়ায় তাদের নিজের লোকদের টাকা পাবার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা শত চেষ্টা করেও টাকা পাচ্ছি না। এদের কেউ কেউ বকেয়া পাওনাদি পাইয়ে দেয়ার জন্য কমিশন দাবি করেছেন। কিন্তু এটা আমাদের ন্যায্য পাওনা, এর জন্য তাদের কমিশন দিতে রাজি না হওয়ায় বেতন আটকে আছে।
অভিযোগ উঠেছে, এম ফরিদ উদ্দিনের একক কর্তৃত্ব নির্ভর হয়ে নাজুক অবস্থার মধ্যে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ ব্যাংকটি। ব্যাংকের পিয়ন থেকে শুরু করে ডিএমডি পর্যন্ত তার সরাসরি নির্দেশ ছাড়া কেউ কাজ করতে পারে না, নড়ে না কোনো ফাইল। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানিরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নানা অনিয়ম, দুর্নীতিতে জর্জারিত এ ব্যাংক। অর্থ কেলেঙ্কারি আর অনিয়মের কারণে বার বার আলোচনায় এসেছেন ব্যাংকটি শীর্ষপদস্থ কতিপয় কর্মকর্তা।
আরো জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে বোর্ডের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়নে অনীহা এ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। তিনি তার পছন্দের বাইরে কিছু করতে রাজি নন। নিয়োগ, পদোন্নতি, ঋণ প্রদান, আদায় ও এলসিসহ একাধিক ক্ষেত্রে তার অনিয়ম নিয়ে বোর্ডে সতর্ক করা হলেও তিনি তা গায়ে মাখেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাংকের এক পরিচালক জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিনের মেয়াদ আর ৬ মাসের মতো আছে। তার পুনরায় এমডি হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণে বোর্ডকে অনেক সময় তোয়াক্কা করছেন না। নিজের মতো করে শেষ সময়ে নিজের লোকদের সুবিধা দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে কথা বললে রূপালী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এমডি স্যার যা বলেন, আমরা তাই করি। আমরা বোর্ডের অধীনে চাকরি করি না। এমডিই আমাদের সব। তার সিদ্ধান্তই আমরা মানি।
কেন ওই কর্মচারীদের পাওনা বেতন দেয়া হচ্ছে না, এ ব্যাপারে ব্যাংকের প্রশাসন ও মানব সম্পদ বিভাগের ডিজিএম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বিষয়টি এড়িয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
ব্যাংকের উপব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. খলিলুর রহমান চৌধুরীর কাছে এ ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে বলেন, ‘ব্যাংকটির অনেক শাখা। হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী। কত ঘটনাই তো ঘটে। কয়টা মনে থাকে বলেন। আমি এ ব্যপারে এখনো কিছু জানি না।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এমডি এম ফরিদ উদ্দীনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘অনেক ঘটনাই তো রয়েছে। আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখবো আসলে কেন এমন হয়েছে।’
ব্যাংকে একক কর্তৃত্ব খাটানোর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা সবকিছুই নিয়মের মধ্যেই করে থাকি। নিয়মের বাইরে কিছু করি না।’
এদিকে, ২০০২ সালে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচারের অভিযোগে মেসার্স ওয়েস্টমেন্ট পাওয়ার (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক ও তৎকালীন জনতা ব্যাংকের লোকাল অফিসের জিএম (বর্তমান এমডি রূপালী ব্যাংক) এমডি এম ফরিদ উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২২ ডিসেম্বর ডেকেছিল দুদক। কিন্তু তিনি দুদকে এদিন উপস্থিত হননি বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে মেশিনারি আমদানির নামে ওয়েস্টমেন্ট পাওয়ার (বাংলাদেশ) লিমিটেডের বিরুদ্ধে জনতা ব্যাংক থেকে ১২ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৭৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা) ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা এবং তা পরে অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগে ২০১১ সালের ১২ এপ্রিল রাজধানীর মতিঝিল থানায় দুদকের উপ-পরিচালক এসএম আখতার হামিদ ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলা (মামলা নং-৬৪) দায়ের করেন।